তৃণমূল নেতার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হল উলুবেড়িয়ায়। বিজেপির অভিযোগ, ‘ক্ষতিগ্রস্ত’দের তালিকায় স্ত্রী এবং ছেলের নাম ঢুকিয়ে তাঁদের ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মিহির মাইতি। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে শাসকদলের ওই নেতার দাবি, তাঁদের দু’টি বাড়িই সে দিন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই কারণে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
আমপানে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার স্বজন-পোষণের অভিযোগ ওঠায় সাঁকরাইলের এক তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। এই নিয়ে দলের মধ্যে চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছে। এই অবস্থায় দলের আরও এক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় শাসকদলের বিড়ম্বনা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন দলেরই একাংশ।
উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের বিজেপি নেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মিহিরবাবু একই বাড়ি দেখিয়ে ছেলে ও স্ত্রীর নামে ক্ষতিপুরণের টাকা নিয়েছেন। উত্তর পিরপুর গ্রামের বাড়িতে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মিহিরবাবু। দ্বিতীয় যে বাড়িটির ক্ষতি হয়েছে বলে উনি দাবি করছেন, সেটি ওঁর বাড়ি নয়। সেখানে উনি ব্যবসা করেন। তা ছাড়া ঝড়ে সেই বাড়িটির কোনও ক্ষতি হয়নি।’’
মিহিরবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের দু’টি বাড়ি। একটি ছেলের নামে। অন্যটি স্ত্রীর নামে। দু’টি বাড়িরই ক্ষতি হয়েছিল। সেই কারণেই স্ত্রী ও ছেলে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।’’ তাঁর ছেলে প্রণব বলেন, ‘‘ঝড়ে বাড়ির ছাদের উপরে গাছ পড়েছিল। তাই ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলাম।’’ মিহিরবাবুর স্ত্রী প্রণতি মাইতি অবশ্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। শুক্রবার মিহিরবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নির্মাণ কাজ চলছে। শঙ্করবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছেলে এবং স্ত্রীর নামে টাকা তুলে দোতলা বাড়ি হাঁকাচ্ছেন। শাসকদলের নেতারা এ ভাবে গরিব মানুষের টাকা লুঠ করছে।’’ ওই বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘ব্লকে অনেক গরিব মানুষের ঘরের ক্ষতি হয়েছে আমপানে। তাঁরা টাকা পাননি। এমনকি, একটি ত্রিপলের জন্য হাহাকার করছেন তাঁরা।’’
তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘‘আমপান ঝড়ের পরে তাড়াহুড়ো করে একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তাতে কিছু ভুল নাম চলে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা দলের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করি, তাঁদের থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে। তার জন্য প্রস্তুতি চলছে।’’
ইলিয়াসের সংযোজন: ‘‘যদি দেখা যায়, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁর স্ত্রী ও ছেলে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন, তবে এক জনের টাকা ফেরত চাওয়া হবে।’’
বিডিও (উলুবেড়িয়া-২) নিশীথকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করা হবে।’’