তাপসীর নামেও বাঁটোয়ারা তৃণমূল

ভাগাভাগির সরল রেখা স্পষ্ট হয়ে রইল ‘তাপসী মালিক দিবসে’ও। এক হতে পারলেন না সিঙ্গুর আর হরিপালের বিধায়ক। 

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:১৬
Share:

বিভক্ত: সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে স্মরণসভায় হাজির চার মন্ত্রী (বাঁ দিকে) একাই তাপসী মালিকের মূর্তিতে মালা দিলেন বেচারাম মান্না (ডান দিকে)। ছবি: দীপঙ্কর দে

ভাগাভাগির সরল রেখা স্পষ্ট হয়ে রইল ‘তাপসী মালিক দিবসে’ও। এক হতে পারলেন না সিঙ্গুর আর হরিপালের বিধায়ক।

Advertisement

প্রতি বছরই সিঙ্গুরে তাপসী মালিক দিবস পালন করে তৃণমূল। ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়ায় মাঠের মধ্যে মিলেছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোরীর আধপোড়া দেহ। বাবা-কাকার সঙ্গে জমি আন্দোলনে মিলেছিল তাপসীও। অভিযোগ, সে কারণেই তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।

এই দিনটিতে তাই এলাকার মানুষকে খিচুড়ি খাওয়ানো, রক্তদান শিবির, তাপসীর মূর্তিতে মালা দিয়ে শহিদ-শ্রদ্ধা— সবই হয়। সব হলও মঙ্গলবার। এলেন রাজ্যের চার মন্ত্রী। এলেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কিন্তু তাঁদের মুখোমুখিই হলেন না হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না।

Advertisement

এমন একটা দিনেও দলের ভিতরের কোন্দল বাইরে এসে পড়ায় ক্ষুব্ধ দলের সবস্তরের কর্মীরাই। সিঙ্গুর আন্দোলনের মুখ মহাদেব ঘোষ এখন সিঙ্গুরে তৃণমূল যুব সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘বেচাদা একবার এসেছিলেন। তাপসীর মূর্তিতে মালা দিয়েই চলে গেলেন।’’ জানা গিয়েছে, বেচারাম এসেছিলেন একেবারে সকালে। চলেও যান তড়িঘড়ি। পরে রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গেই আসেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষিবিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, ধনেখালির বিধায়ক ও মন্ত্রী অসীমা পাত্র।

রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে বেচারামের সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে এর আগে অনেকবার জল ঘোলা হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। গত কয়েক বছর ধরেই সেই আকচা-আকচি এখন চরম পর্যায়ে। অভিযোগ, তারই জেরে রাজ্যের বেশিরভাগ পঞ্চায়েত সমিতি গঠিত হয়ে গেলও হয়নি সিঙ্গুরের বোর্ড গঠন। নির্বাচনের পর আট মাস গড়িয়ে গিয়েছে বোর্ড গ়ড়তে। সেখানেও পড়েছে কোন্দলের ছায়া। হুগলিতে দলের পর্যবেক্ষক হিসাবে ফিরহাদ হাকিম বা অরূপ বিশ্বাসও সে কোন্দলে লাগাম পরাতে পারেননি।

গত সপ্তাহে ছিল পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন। বিরোধী শূন্য হলেও ভোটাভুটি এড়াতে পারেনি তৃণমূল। সেখানে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য গোষ্ঠী হেরে গিয়েছে বলে দাবি বেচারাম গোষ্ঠীর। তার আগে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনেও ভোটাভুটি হয়েছে। সেখানে আবার বেচারাম গোষ্ঠীর হার হয়েছিল বলে দাবি। দলের নিচুতলার কর্মীরা এ দিন বলাবলি করেছেন, চার মন্ত্রীকে এনে সমিতিতে হারের বদলা নিলেন মাস্টার মশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বেচারাম মান্নার নাম কার্ডে, পোস্টারে— সর্বত্রই ছিল। কিন্তু ও তো জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে এল না! এটা শহিদ স্মরণ, এখানে কোনও বিভাজন করা ঠিক নয়।’’

বেচারামের গলায় অবশ্য অভিমান, ‘‘পোস্টারে নাম আছে কিনা, তাতে আমার কিছু এসে যায় না। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনে আমার মাথায় ৬৪ টি মামলা চেপেছে। আমি শুধু সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করার চেষ্টার করি। যাঁরা শহিদের নাম করে আমাকে অসম্মান করার চেষ্টা করছেন, তাঁরাও সত্যটা জানেন।’’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেচার সমস্যাটা কোথায় আমি জানি না। দলের নির্দেশই ও মানে না।’’

শহিদ দিবসে তৃণমূলের কোন্দল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধী নেতারা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘শহিদ দিবসে পালনের এমন নজির শুধু তৃণমূলই রাখতে পারে।’’ ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় প্রায় একই সুরে বলেন, ‘‘গোষ্ঠী কোন্দলটাই তো তৃণমূলের ঐতিহ্য। সে জন্যই তো আট মাস পেরিয়ে গেল বোর্ড গড়তে। যাঁদের ভোটে জেতেন, তাঁদের পরিষেবা দিতেই পারেন না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement