প্রহৃত নীলকান্ত দাস। মঙ্গলবার বেলুড়ে। নিজস্ব চিত্র
যাঁর মোটরবাইক, তাঁকেই বাইকের তালা ভাঙার ‘অপরাধে’ থানায় নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই যুবকের সারা গায়ে মারের দাগ স্পষ্ট। সোমবার রাতে বেলুড়ের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বেলুড় বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরেই খোকন খাঁড়া নামে এক প্রোমোটারের সঙ্গে বিবাদ চলছিল নীলকান্ত দাস নামে এক যুবকের। খোকনবাবুর অভিযোগ, বকেয়া ৯০ হাজার টাকা কুড়ি মাস ধরে শোধ করছিলেন না নীলকান্ত। অভিযোগ, এই বিবাদ ঘিরেই ফ্ল্যাটের নিচে থাকা নীলকান্তের বাইকে বিকেলে চেন-তালা লাগিয়ে দেন খোকনবাবু। নীলকান্ত বলেন, ‘‘খোকনদাকে অল্প অল্প করে টাকা শোধ করে দেওয়ার কথা বললেও উনি তালা খুলতে রাজি হননি।’’
নীলকান্তের দাবি, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি বেলুড় থানায় বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বলেন, রাত হয়েছে সকালে বিষয়টি দেখে দেব।’’ নীলকান্তের দাবি, রাতে বাইকের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি ফের খোকনকে ফোন করেন। কিন্তু তালা খোলা হবে না এবং ‘বেলুড়ে কেউ আমার কিছু করতে পারবে না’ বলে খোকন হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করে খোকনবাবু বলেন, ‘‘নীলকান্ত দীর্ঘ দিন ধরে আমার টাকা দিচ্ছিল না। আগে এক বার আমার ঘরের তালা ভেঙে ঠাকুরের বাসন, গয়না চুরি করেছিল। এক সময় খুব ভালবাসতাম তাই কিছু বলিনি। আমি কেন ওর বাইকে তালা দেব?’’
নীলকান্ত জানান, রাতে মোটরবাইকের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি তালা ভাঙেন। এর পরেই পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে বেলুড় থানায় নিয়ে যায়। নীলকান্ত বলেন, ‘‘খোকনদা তালা দেওয়ার পরেও আমি কেন তালা ভেঙেছি তা বারবার জানতে চান পুলিশকর্মীরা। আমার কথা না শুনেই সারা রাত লকআপে রেখে দেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘সকালে থানার একটা ঘরে ঢুকিয়ে কয়েক জন পুলিশ কর্মী মিলে বেধড়ক মারধর করেন, আর বারবার জানতে চান কী দিয়ে তালা কেটেছি।’’ মঙ্গলবার দুপুরে জায়সবাল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান ওই যুবক। তাঁর হাতে পিঠে বুকে মারের চোটে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে জানান নীলকান্ত। তিনি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে এমন অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’