অতিরিক্ত জেলাশাসকের পাঠানো সেই চিঠি।
নির্বাচনই হয়নি। তা সত্ত্বেও রিষড়া পুরসভার নয়া চেয়ারম্যান হিসেবে জনৈক কাউন্সিলরের নামে ‘সিলমোহর’ দিয়ে দিল হুগলি জেলা প্রশাসন! আজ, শুক্রবার নয়া পুরপ্রধান ঠিক হওয়ার কথা।
গত ২৯ অক্টোবর হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসকের (সাধারণ) সই করা চিঠিতে (মেমো নম্বর ২১৪২/এমভি) হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার কয়েক জন পুরপ্রধানকে জানানো হয়, ২ নভেম্বর পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী পরিবহণ ভবনে তাঁদের সঙ্গে ফেরি চলাচল বিষয়ে বৈঠক করবেন। চিঠিতে রিষড়া পুরসভার কাউন্সিলর বিজয়সাগর মিশ্রকে পুরপ্রধান হিসেবে সম্বোধন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে শাসক দলের অন্দরে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে তৃণমূলের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) কৌশিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাজ্য থেকে নির্দেশ পেয়ে তিনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন (ফরওয়ার্ড) মাত্র। যদিও তাঁকে চিঠি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হতে পারে আঁচ করে গত বুধবার ওই বৈঠকে হাজিরই হননি বিজয়বাবু। রিষড়া পুরসভার এক কাউন্সিলর এবং এক অফিসার বৈঠকে যোগ দেন। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে বিজয়বাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ছুটির পরে ২ নভেম্বর পুরসভা খুলেছে। এমন কোনও চিঠির ব্যাপারে জানা ছিল না।’’ তাঁর এমন উত্তর শুনে এক কাউন্সিলরের টিপ্পনি, ‘‘শুক্রবার কাউন্সিলরদের বৈঠকে পুরপ্রধানের নাম ঠিক হওয়ার কথা। অথচ তার আগেই প্রশাসন পুরপ্রধানের নাম ঠিক করে ফেলেছে!’’
গত পুরভোটে জিতে রিষড়ার পুরপ্রধান হন তৃণমূল নেতা শঙ্করপ্রসাদ সাউ। নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি দল তাঁকে এবং উপ-পুরপ্রধান সাকির আলিকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মেনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শঙ্করবাবু। যদিও শাসক দল এখনও পরবর্তী চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করে উঠতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরেও ক্ষোভ রয়েছে।
গোড়া থেকেই বিজয়বাবুর নাম চেয়ারম্যান হিসেবে শোনা যাচ্ছিল। তৃণমূল শিবিরের খবর, প্রথম দিকে তাঁকে অনেকেই মানতে চাননি। এ নিয়ে দল কার্যত দু’ভাগ হয়ে পড়ে। এখন অবশ্য কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই বিজয়বাবুর দিকে ঝুঁকে রয়েছেন বলে শাসকদলের এক শীর্ষ নেতার দাবি। দলীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে এক কাউন্সিলরের বাড়িতে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঘরোয়া আলোচনা হয়। সেখানে দলের ১৫ জন কাউন্সিলরই বিজয়বাবুকে পুরপ্রধান হিসাবে চান বলে জানান। সাকির আলি বা শঙ্করবাবু অবশ্য সেখানে ছিলেন না।
এই অবস্থায় বিড়ম্বনা এড়াতে শুক্রবার পুরপ্রধান ঠিক করার বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার সময় কাউন্সিলরদের হাতে দলের হুইপ তুলে দেওয়া হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
এ দিকে, পুরপ্রধানের পদত্যাগের পরবর্তী সময়ে পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীদের একাংশ বেতন পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি পুরসভার তহবিলের অবস্থাও শোচনীয় বলে শাসক দল সূত্রে খবর। নতুন চেয়ারম্যান কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন, সেটাই এখন দেখার।