সুনসান নৈসরা বাজার। সোমবার ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।
‘তোলা’ আদায়ের প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ীদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের যুব নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। এই মারধরের প্রতিবাদে সোমবার বাজারের সমস্ত দোকান পাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন ব্যবসায়ীরা। ঘটনাটি আরামবাগের নৈসরাই বাজারের। অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করেন তৃণমূল নেতারা। তার প্রতিবাদ করেছিলেন করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। মাস চারেক নেতাকে কেউ টাকাও দেননি। তারই জেরে রবিবার রাতে আরামবাগের নৈসরাই বাজারে ব্যবসায়ীদের মারধর করেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মমতাজ বেগমের ছেলে তথা স্থানীয় যুব নেতা ইমরান খান ও তাঁর লোকেরা। মমতাজ বেগম অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কয়েকদিন গোঘাটের বিরামপুরে বাপেরবাড়িতে এসেছি। ছেলে অন্যায় করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। দলও ব্যবস্থা নেবে।’’
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতেই ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেখ মমতাজ আলি, রামু মালিক-সহ ৪ অভিযুক্ত পলাতক। ব্যবসায়ীদের হুমকি, অভিযুক্তদের সকলকেই অবিলম্বে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত দোকান বন্ধ থাকবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নৈসরাই বাজারে মোট ৯০টি দোকান আছে। একাধিকবার চুরির কারণে ব্যবসায়ীরা পালা করে গত দেড় বছর ধরে পাহারা দিচ্ছেন। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ বাজারে পাহারাদার ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকজন নৈসরাই বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন প্রতীক্ষালয়ের কাছে রান্না করছিলেন। বাকিরা বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। তখনই ইমরান তাঁর দলবল নিয়ে অনিল পাত্র নামে দর্জিখানার মালিক-সহ জনা তিন ব্যবসায়ীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শেখ সাজাহান-সহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে যান। ফের ইমরান তাঁর দলবল নিয়ে তাঁদের মারধর করেন। শেখ সাজাহান এবং অনিল পাত্রকে গুরুতর আহত অবস্থায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইমরান খানের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। দোকানে-দোকানে গিয়ে কারাও কাছে ২০০ টাকা, কারও কাছে আবার ৫০০ দাবি করে। দলের শীর্ষ নেতাদের জানিয়েও সুরাহা হয়নি। মাস চার আগে ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, কেউ টাকা দেবেন না ইমরানকে। টাকা চাইতে এলে সকলে মিলে রুখে দাঁড়াবে। তারপর থেকে আর টাকা পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই ক্ষোভে বহুবার তিনি হুমকিও দিয়েছিলেন। শেখ সাজাহানের অভিযোগ, ‘‘অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জামিন পেয়ে ফের হামলা করেছে। এ বার আমরা একটা বিহিত চাই। প্রয়োজন মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হব।’’ এর একটা বিহিত চেয়ে এ দিন বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টা জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্য মমতাজ বেগমকে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপনণ মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো তোলাবাজি নিয়ে দল এবং প্রশাসন কঠোর। প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। দলও ব্যবস্থা নেবে।’’