কড়া: পুলিশি নজরদারিতে স্ট্রংরুম। আরামবাগ গার্লস কলেজে। ছবি: মোহন দাস
ভোটের সরঞ্জাম সিঙ্গুর সরকারি কলেজ থেকে বুঝে নিয়ে রবিবার সকালে বাইরে পা রেখেই থমকে গিয়েছিলেন তারাপদ দাস। ঝ়ড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগের সেই শুরু। বিডিও অফিসের কর্মী তারাপদবাবু আশা করেছিলেন, সোমবার রাতে অন্তত বাড়ি ফিরতে পারবেন। কিন্তু বিধি বাম। তাঁর কেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোট চলল রাত পর্যন্ত। তারপর প্রতিটি দলের এজেন্টকে সাক্ষী রেখে ব্যালট বাক্স সিল করা, স্ট্রং রুমে সরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের জিম্মায় সে বাক্স গচ্ছিত রেখে যখন তিনি বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন তখন ভোরের সূর্য সবে উঁকি দিতে শুরু করেছে।
তারাপদবাবু একা নন, সোমবার রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এজেন্ট এবং ভোট কর্মীদের অভিজ্ঞাতা কমবেশি একই রকম। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় ছিল ভোট গ্রহণের নির্দিষ্ট সময়। একেবারে শেষে সময়সীমার মধ্যে যাঁরা ভোট দিতে আসেন প্রিসাইডিং অফিসার তাঁদের হাতে টোকেন দিয়ে দেন। খুব গোলমাল না হলে সন্ধ্যার মধ্যেই ভোট প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু এ বার মাত্রাছাড়া দেরি হয়েছে হুগলির বহু বুথেই। সিঙ্গুরের বিডিও সুমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নিয়মমাফিক পুরো প্রক্রিয়া মেটাতে ভোর সাড়ে ৫টা বেজে গিয়েছে। চণ্ডীতলার বিডিও এষা ঘোষ অবশ্য স্ট্রং রুমের কাজ রাত সাড়ে ৩টের মধ্যে মিটিয়ে ফেলেছেন। হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না জানান, হরিপালে পুরো কাজ শেষ হয়েছে রাত ২টো নাগাদ। হরিপালের বলদবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাসকদলের এ বার এজেন্ট ছিলেন স্বরূপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম সন্ধ্যার ভিতরে সব মিটে যাবে। কিন্তু আমাদের সই-সাবুদ করে বেরিয়েছি রাত আড়াইটে নাগাদ।’’
কেন এমন দেরি?
ভোট কর্মীদের অনেকে বলছেন, ত্রিস্তর ভোট, তাও ব্যলটে। তাই প্রায় প্রতি ভোটারই তিনটি ব্যলটে ছাপ দিতে অনেকটা সময় নিয়েছেন। বয়স্ক ও নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেড়েছে। তারই জেরে কোথাও রাত ৯ কোথাও আবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলে।
তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভোট কর্মীদের গাফিলতির প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিঙ্গুরের গোপালনগর এলাকার একটি বুথে ভোটকর্মীরা সাদা কাপড় আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। ব্যালট বাক্স ওই সাদা কাপড়ে মুড়েই সিল করা হয়। ভোট কর্মীরা চেয়েছিলেন কাপড় ছাড়াই বাক্স সিল করে ফেলতে। কিন্তু বেঁকে বসেন সিপিএম এবং বিজেপি-র এজেন্টরা। ফলে ওই রাতে এক সরকারি কর্মী ফের ছোটেন সরঞ্জাম বিলি কেন্দ্রে। মঙ্গলবার দুপুরে পর্যবেক্ষকেরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনে সমীক্ষা রিপোর্ট ‘সন্তোষজনক’ পাঠাতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সংশ্লিষ্ট বিডিও-রা।
কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, ভোট প্রক্রিয়া মিটতে এই যে দেরি, তাতে শুধু যে ভোটকর্মীরা নাকাল হয়েছেন তাই নয়। বরং ওই দেরি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কতটা ঢিলেঢালা প্রস্তুতিতে তড়িঘড়ি মিটিয়ে ফেলা হল এতবড় একটা ভোট। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘ত্রিস্তর নির্বাচনে একটু দেরি হয়। কিন্তু এ বার যা হল তেমন দেখিনি আগে কখনও। কোথাও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যে যা পেরেছে করেছে। তাই দেরি হয়েছে।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সব জায়গায় তো এমন দেরি হয়নি। কোথাও কোথাও তিনটি ব্যালট দিতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে। ভোটারদের অজ্ঞতা যেমন ছিল, তেমনই ভোটকর্মীদের গাফিলতিও দায়ী।’’