মুখ-ঢেকে: আদালতের পথে অভিযুক্তরা। ছবি: সুশান্ত সরকার
ভাসুরের একরত্তি ছেলে সাকিব শেখকে ওড়নার ফাঁসে খুন করার কথা পুলিশের কাছে আগেই কবুল করেছিল পান্ডুয়ার কোহিনূর বিবি। পুলিশের দাবি, রবিবার কোহিনূর কবুল করেছে, খুনের আগে তিন বছরের শিশুটির বুকের উপরে সে চেপে বসেছিল। সাকিবের দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও সে কথাই বলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কী রয়েছে ওই রিপোর্টে?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু শ্বাসরোধ করে খুনে কেন শিশুটির শরীরের ওই দুই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার কারণ খুঁজতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ধারণা হয়, শুক্রবার সকালে সাকিবকে নিজের ঘরে এনে শুইয়ে দিয়ে তার বুক হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে কোহিনূর। তার পরে ছেলেটির মুখে নিজের একটি ওড়না ঢুকিয়ে দেয়। ওড়নার অনেকটা অংশ শিশুটির মুখের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্য একটি ওড়না দিয়ে তার নাকমুখ পেঁচিয়ে দেয় কোহিনূর। নিথর হয়ে যায় ছোট্ট সাকিব। কাকিমার হাঁটুর চাপ সে নিতে পারেনি। তাতেই কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে জেরায় সে কথা কোহিনূর কবুল করে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
শুক্রবার রাতে পান্ডুয়ার রওজাপাড়ার বাসিন্দা সাকিবের দেহ মেলে কয়েক কিলোমিটার দূরে ডেলোগাছিতে কোহিনূরের মাসতুতো দিদি তাজমিনা বিবির বাড়ি থেকে, ট্রলিব্যাগে ঢোকানো অবস্থায়। খুন এবং প্রমাণ লোপের ধারায় কোহিনূর, তাজমিনা এবং তাজমিনার স্বামী আজিজুল শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের রবিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তিন জনকেই ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: কেমন ফাঁস দিলে কেমন দাগ? রজত খুনের আগে ইন্টারনেটে সার্চ করেছিলেন অনিন্দিতা
পুলিশের ধারণা, সাকিবের বাবা-মায়ের উপরেও ক্ষোভ রয়েছে কোহিনূরের। তা মেটাতেই সাকিবকে সে খুন করে। কোহিনূর যখন এই কাণ্ড করছে, তখন নিজের বছর তিনেকের মেয়ে মোবাইল নিয়ে খেলছিল। পরে সে পুলিশকে বলে, ‘‘দাদা দুষ্টুমি করছিল বলে মা মারছিল। দাদাকে মা ব্যাগে ভরে দেয়।’’
রবিবার সাকিবের মা শবনম শেখ তাঁর জায়ের ফাঁসি চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোহিনূর আমার ছেলেটাকে কত কষ্ট দিয়ে মেরেছে! ওর ফাঁসি চাই। নয়তো এমন কঠোর সাজা দেওয়া হোক, যাতে এই রকম কাজ করার সাহস কেউ না পায়।’’ একই সঙ্গে শবমের দাবি, ‘‘ও পুলিশকে বলেছে, আমাদের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। নিজেকে বাঁচাতে ও মিথ্যা বলছে। কোনও বিবাদ ছিল না। সম্পত্তি প্রয়োজন থাকলে চাইতে পারত। কেন দুধের শিশুটাকে মেরে ফেলল, ভেবে পাচ্ছি না।’’