দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় পাঁচ বছর অডিট বন্ধ ছিল আরামবাগের বাছানরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির। ঋণ পাচ্ছিলেন না চাষিরা। সস্প্রতি সেই অডিট সম্পূর্ণ হল। চাষিরা মনে করছেন, এ বার চাষের জন্য সহজে ঋণ মিলবে। আর মহাজনের দ্বারস্থ হতে হবে না।
২০০৯-১০ অর্থবর্ষ থেকে ওই সমিতির কোনও অডিট না হওয়ায় হুগলি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই বিভিন্ন মরসুমে ঋণ না পাওয়ায় চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে জেরবার ছিল ব্লক এবং জেলা সমবায় দফতর। চাষিদের চাপে এবং ব্লক সমবায় দফতরের তত্পরতায় গত মার্চ মাসে সেই অডিট শেষ হয়। চাষিদের দাবি, এ বার সমিতিটিকে দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু হোক। যাতে সামনের আমন চাষের মরসুমে তাঁরা ঋণ পান।
ব্লক সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিদের ঋণ দানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে, এ বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। দীর্ঘ দিন অডিট বন্ধ থাকায় সমবায়টির স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে সমবায়ের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তা ছাড়া চাষিরাও ঋণ শোধ করতে পারেননি। ফলে, সমস্ত ঋণী সদস্যই খেলাপি (ডিফল্টার) ঋণের আওতায় পড়ে গিয়েছেন। প্রায় ৩ কোটি টাকার উপর ঋণ অনাদায়ী পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে না।
ব্লক সমবায় আধিকারিক সুজন দে অবশ্য বলেন, ‘‘ঋণ সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলছে। চাষিদের দাবির কথা জানিয়ে ঋণ দান সংক্রান্ত আইনকানুন কিছুটা শিথিল করার জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’
২০১০ সাল জুলাই মাসে সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনা নিয়ে আরামবাগের বাছানরী সমবায় সমিতি-সহ কয়েকটি কৃষি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের তরফে কয়েক দফা তদন্ত চলে। ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের তরফে আরামবাগ থানায় বাছানরীর তৎকালীন সভাপতি, সম্পাদক, ম্যানেজার-সহ ১৩ জনের নামে এফআইআর দায়ের হয়। সেই থেকে সমবায়টির অডিট বন্ধ ছিল।
আমন-আলু এবং বোরো— এই তিনটি মরসুমে চাষিরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি থেকে ঋণ নিতে পারেন। দু’টি মরসুমের ঋণ এক সঙ্গে নেওয়া যায়। তবে, পরবর্তী মরসুমের চাষে ঋণ নিতে হলে আগের দু’টি মরসুমের নেওয়া ঋণের অন্তত একটি শোধ করতে হয়। শেষবার ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ব্লক সমবায় দফতরের তদ্বিরে ওই সমিতির সদস্য-চাষিরা ঋণ পেয়েছিলেন আলু চাষে।
সমবায়ের সদস্য-চাষি অমর দে, গোপালচন্দ্র পাল, সুধাংশু মণ্ডলেরা জানান, এত দিন ঋণ না পেয়ে তাঁদের কেউ কেউ কেউ কেউ চাষের এলাকা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে মহাজনের থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। এ বার সমবায় থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।