আন্দুল শহর বেশ পুরনো। এই শহর একদিকে যেমন এ শহরের খ্যাতি তার রাজবাড়ির জন্য। অন্যদিকে হাওড়া শহরের খুব কাছে হওয়ায় শহরে গড়ে উঠেছে একটা নাগরিক মনন। শিক্ষা, সংস্কৃতি সব দিক দিয়েই আন্দুল টেক্কা দিতে পারে যে কোনও আধুনিক শহরের সঙ্গে। এটা যদি হয় ভালর দিক তা হলে শহরের অন্য দিকটির কথাও উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে। তা হল কলকাতা এবং হাওড়া শহরের কাছে হওয়া সত্ত্বেও এই শহরের পরিকাঠামো থেকে গিয়েছে মান্ধাতা আমলেই। ফলে রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য পরিষেবা ইত্যাদিতে উন্নত পরিষেবার সুযোগ আন্দুলের মানুষ পাচ্ছে না। যদিও গত কয়েক বছরে ধরে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নতি কিছুটা চোখে পড়েছে। কিন্তু পানীয় জল সরবরাহে এখনও ঘাটতি থেকে গিয়েছে। এখানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দু’টি পাম্পহাউস থাকলেও জলের চাপ এতটাই কম, যে সর্বত্র জল সমানভাবে পৌঁছয় না। এখানে নেই কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মহিয়াড়িতে যদিও রয়েছে লক্ষ্মীকমল হাসপাতাল। কিন্তু তার পরিষেবা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে সাঁকরাইলে রয়েছে হাজি এসটি মল্লিক ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সেখানে যাতায়াত আন্দুলবাসীর পক্ষে বেশ অসুবিধাজনক। এছাড়া সরস্বতী নদী হল আন্দুলের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু মাঝে সংস্কার হলেও বর্তমানে সেই সংস্কারের কাজ বন্ধ। ফলে একদিকে যেমন নিকাশির সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ধ নদী পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্দুলকে মডেল শহর হিসাবে গড়ে তুলতে হলে এইসব দিকে নজর দিতেই হবে।
অশোক ভট্টাচার্য, আন্দুল পূর্বপাড়া।
ঐতিহাসিক আন্দুল রাজবাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা।
আন্দুল শহরের সঙ্গে একাসনে বসানো যায় আন্দুল রাজবাড়িকে। ১৮৩০ সালে এই রাজবাড়ি তৈরি শুরু হয়। শেষ হয় ১৮৩৪ সালে। নির্মাণশৈলির জন্য শুরু থেকেই এটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণের বিষয়। কালের নিয়মে রাজবাড়ির সেই জাঁক এখন অদৃশ্যে। কিন্তু দর্শনার্থীদের কাছে এর আকর্ষণ থেকে গিয়েছে আগের মতোই। আন্দুলের মানুষ রাজবাড়িকে তাঁদের গর্বের প্রতীক বলেই মনে করেন। রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ভাবনা এই পরিবারের সদস্যরা শুরু করেন অন্তত চল্লিশ বছর আগে। কিন্তু সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা পরিবারের সদস্যদের কাছে নেই। তাই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদম জানানো হয়। সুখের কথা, এতদিন পরে তা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে নাচমহলটি পুরোপুরি এবং বাকি ঘরগুলির বাইরের অবয়ব সংস্কার করা হবে। রাজবাড়ি যে অবস্থায় ছিল অবিকল সেই অবস্থা রেখেই সংস্কার করা হবে। সমগ্র আন্দুলবাসীর সঙ্গে আমরাও এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কবে সেই শুভক্ষণ আসে সেই দিনের জন্য।
অরুণাভ মিত্র, আন্দুল রাজপরিবারের অন্যতম শরিক।
এক সময়ে এ শহরের পাড়ায় পাড়ায় হতো রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন। ছিল প্রচুর নাটকের দল। এখন সে সব উধাও। রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন আর হয় না বললেই চলে। নাটকের দলও ঠেকেছে গুটিকয়ে। সংস্কৃতি চর্চার এই যে পরিবর্তন, ধামাকা নির্ভর সংস্কৃতি তা হয়তো সর্বগ্রাসী। ফলে শুধু আন্দুলেই এই পরিবর্তন ঘটেছে এটা বলা যাবে না। তবে শহরের নিজস্ব কিছু ঘাটতির দিকে যদি নজর দেওয়া যায় তা হলে এটা ঠেকানোর সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। সংস্কৃতিবান এবং ঐতিহ্যবাহী এই শহরে নেই কোনও অডিটোরিয়াম। সংস্কৃতি চর্চা যাঁরা করেন তাঁরা যাবেন কোথায়? একজন নাট্যকর্মী হিসাবে বলতে পারি, এই শহরে এক বা একাধিক অডিটোরিয়াম প্রয়োজন। তা হলে সংস্কৃতির এই অবক্ষয় অনেকটা ঠেকানো যাবে বলে আমি মনে করি।
সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, চৌধুরীপাড়া।