প্রতীকী ছবি
হাসপাতালে শিশু বদলের অভিযোগ তুলে ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন এক প্রসূতির পরিবারের লোকেরা। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, শিশু বদলের ঘটনা ঘটেনি। প্রসূতির বাড়ির লোককে অন্য একটি সন্তানকে দেখানোয় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
ওই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘শিশু দেখানোর ক্ষেত্রে দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ভুল হওয়াতেই এই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রসূতির বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মীদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সেই চিঠি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ তিনি জানান, হাসপাতালের তরফে তাঁদের বলা হয়, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁরা পুলিশে অথবা আদালতের দ্বারস্থ হতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের রিপোর্ট চাইলে, তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রাবন্তী দাস নামে সিঙ্গুরের বাড়ুইপাড়ার এক মহিলা শুক্রবার গভীর রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত ২টো নাগাদ অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম হয়। শ্রাবন্তীর স্বামী সুকান্ত দাসের অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান দেখানো হয়েছিল। ঘণ্টাখানেক পরে জানানো হয়, তাঁদের কন্যাসন্তান হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা মানতে পারেননি। এই নিয়ে কর্তব্যরত নার্স এবং কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান সুকান্ত। তাতে শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানান তিনি।
সোমবার সকালে প্রবীরবাবু হাসপাতালে আসেন। তাঁর কাছেও সুকান্ত এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা একই অভিযোগ করেন। তাঁরা জানান, পুত্রসন্তান হয়েছে জানিয়ে ‘মিষ্টি খাওয়া’র টাকা চান হাসপাতালের কর্মীরা। ‘দরদাম’ করার পরে সুকান্ত তাঁদের ৭০০ টাকা দেন। পরে সন্তান বদলের বিষয়টি নিয়ে চেঁচামেচি হওয়ায় সেই টাকা ফিরিয়ে দেন। সুকান্তের বক্তব্য, হাসপাতালের এত বড় ভুল কী করে হয়? যে সন্তানকে তিনি মানুষ করবেন, তাঁকে নিয়ে কোনও সংশয় থাকুক তা তাঁরা চান না। তাই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান তিনি।
হাসপাতালের একটি অংশের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী, সন্তানের জন্ম হওয়ার পরে প্রথমে প্রসূতিকে দেখানো হয়। তার পরে বাড়ির লোকজনকে দেখানো হয়। শ্রাবন্তীকে তাঁর কন্যাসন্তান দেখিয়ে পাশে রাখা হয়েছিল। তখন চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মী অন্য এক প্রসূতির পুত্রসন্তানকে শ্রাবন্তীর ছেলে বলে দেখিয়ে দেন। নির্দিষ্ট কাগজে তাঁদের সই করিয়েও নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে নার্সের চোখে ওই ভুল ধরা পড়ে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘জন্মের পরেই সন্তান এবং প্রসূতির হাতে একই নম্বরের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। শ্রাবন্তী এবং তাঁর মেয়ের হাতেও একই নম্বরের ট্যাগ রয়েছে।’’ প্রবীরবাবুরা ওই প্রসূতির কাছেও যান। প্রসূতি জানান, প্রসবের পরে তাঁকে কন্যাসন্তানই দেখানো হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সন্তানকে বাড়ির লোকের কাছে দেখানোর কথা কর্তব্যরত নার্সের। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর নয়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের তরফে ‘ভুল’ হয়েছে বলে তাঁরা মানছেন।
ওই দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর দাবি, বাড়ির লোককে শিশু দেখান নার্সই। ওই রাতে এক জন মাত্র নার্স ছিলেন। দুই টেবিলে দুই প্রসূতি ছিলেন। তাঁদের নিয়েই নার্স ব্যস্ত ছিলেন। সেই কারণেই তাঁর কথায়, তাঁরা একটি পুত্রসন্তানকে তাঁর পরিবারের লোকজনকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রসূতির নাম ধরে ডাকার পরে সুকান্তরা চলে আসেন। বাচ্চাটি যে অন্য পরিবারের তা না বুঝেই সুকান্তদের দেখানো হয়। সইও করিয়ে নেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন ওই দুই কর্মী।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট দেবপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করেছি। কারও দোষত্রুটি থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’