সৌম্যজিৎ দাস (বাঁদিকে)। ধৃত অরবিন্দ তাঁতি(ডানদিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ
এক কিশোরকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে তার সৎ বাবাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার সকালে হুগলি স্টেশন রোড এলাকার একটি ঝোপের ধারে সৌম্যজিৎ দাস (১২) নামে ওই কিশোরের দেহটি মেলে। মুড়ি কিনতে বেরিয়ে হুগলির কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা ওই কিশোর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার মায়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সৌম্যজিতের সৎ বাবা অরবিন্দ তাঁতিকে এ দিনই গ্রেফতার করে।
তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে ওই কিশোরকে আঘাত করা হয়েছে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়েছে। হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও জানান, সংসারিক বিবাদের জেরেই কিশোরকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সৌম্যজিতের মা সোমাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী আমাকে সন্দেহ করত। সে জন্য মারধরও করত। আমি তাই ছেলেকে নিয়ে মায়ের কাছে থাকছিলাম। আমার উপর আক্রোশেই স্বামী ছেলেকে খুন করল।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে সোমাদেবীর সঙ্গে তাঁর প্রথম পক্ষের স্বামীর বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। সৌম্যজিৎ তাঁদেরই সন্তান। ছেলেকে নিয়ে সোমাদেবী কৃষ্ণপুরে মায়ের কাছে থাকছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে ব্যান্ডেলের লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দের বিয়ে হয়। ছেলেকে মায়ের কাছে রেখে সোমাদেবী স্বামীর সঙ্গে লালবাবা আশ্রমের কাছে একটি ভা়ড়াবাড়িতে থাকছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে দু’জনের সম্পর্কের অবনতি হয়। সাংসারিক অশান্তি মাথাচাড়া দেয়। অরবিন্দ স্ত্রীকে সন্দেহ করত বলে অভিযোগ। সোমাদেবী ইদানীং কৃষ্ণপুরে মায়ের কাছেই থাকছিলেন। অরবিন্দ তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও সোমাদেবী রাজি হননি।
সৌম্যজিৎ চুঁচুড়ার রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। সোমাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে অরবিন্দ কৃষ্ণপুরে তাঁকে ছেলের পড়ার খরচ দিতে আসে। খেলা শেষে সন্ধ্যায় সৌম্যজিৎ বাড়ি ফিরতে অরবিন্দ তাকে মুড়ি কিনে আনতে টাকা দেয়। ছেলে বেরিয়ে যেতেই অরবিন্দ নিজের মোটরবাইক নিয়ে চলে যায়। রাতে অনেক চেষ্টা করেও ছেলের খোঁজ পাননি সোমাদেবী। শনিবার সকালে অরবিন্দ স্ত্রীকে নিয়ে ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে হাওড়া পর্যন্ত সৌম্যজিতের সন্ধানে ঘোরাঘুরিও করে। কিন্তু কোনও খোঁজ না পেয়ে চুঁচুড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে এসে সোমাদেবী জানতে পারেন, স্টেশন রোড এলাকার একটি ঝোপে এক কিশোরের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে। সোমাদেবী ও তাঁর মা লক্ষ্মী সরকার সেখানে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠায়। সৌম্যজিৎ খুন হওয়ার কথা জানতে পেরে এলাকার কিছু লোক তার দিদিমার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।