জলাশয় ভরাটের অভিযোগ ঘিরে হাতাহাতি ডোমজুড়ে

একটি জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরির চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে কয়েক মাস ধরেই ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে বিরোধ চলছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলএলআরও) দফতরের একটি প্রতিনিধি দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

পুকুর ভরাট করে শুরু হয়ে নির্মাণকাজ। ছবি: সুব্রত জানা।

একটি জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরির চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে কয়েক মাস ধরেই ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে বিরোধ চলছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলএলআরও) দফতরের একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। ছবি তুলতে গিয়ে প্রহৃত হন এক সাংবাদিক। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট এবং গোলমালে জড়িত অভিযোগে পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

ডোমজুড়ের বিএলএলআরও বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। ওই দফতরের এক কর্তা জানান, যে জায়গা নিয়ে গোলমাল, সেটি সরকারি ভাবে আগে বাস্তুজমি বলে নথিভুক্ত থাকলেও বাস্তবে ওই জায়গায় একটি জলাশয় ছিল। সেটি ঘেরার জন্য সরকারি গার্ডওয়া‌ল এখনও রয়ে গিয়েছে। বিএলএলআরও কাজে যোগ দিলে তাঁকে পুরো বিষয়টি জানানো হবে। দফতরের যে প্রতিনিধি দল এ দিন তদন্তে গিয়েছিল তার এক সদস্য বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে দু’পক্ষকে নোটিস দিয়েই তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। আমরা যখন এক পক্ষের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন পাশে গোলমাল ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।’’

পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই আবাসন সংস্থার ম্যানেজার, সুপারভাইজার-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত, প্রোমোটার রাজু পাল পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। রাজুবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর কয়েক আগে এলাকায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সত্যজিৎ পাল ওরফে রাজু নামে ওই প্রোমোটার লক্ষ্মীকমল হাসপাতালের সামনে একটি বাড়ির শরিকি সম্পত্তি কেনেন। তার কিছু দিন পরে বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুর ভরাট করতে শুরু করেন তিনি। প্রথমে পাঁচিল দিয়ে পুকুরটি ঘিরে দেওয়া হয়। তার পর পুকুরে আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। কয়েক মাসের ভিতর আবাসন সংস্থা খুলে ফেলেন তিনি। পুকুরের পাশের একটি পাঁচিল-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সেই সংস্থার হোর্ডিং টাঙিয়ে আবাসনের ‘বুকিং’-এর ঘোষণা করা হয়। এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা সৈকত রায় বলেন, ‘‘প্রথমে ওই পুকুর থেকে জল তুলে পাশের পুকুরে ফেলা হয়। তার পর শুরু হয় নির্মাণকাজ। জেলা পরিষদের মুখ্য বাস্তুকার, সভাধিপতি, ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিএলএলআরও-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। কয়েক বার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জনকে আটকও করে। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টকেও জানানো হয়েছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে প্রোমোটারের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, যে জমি নিয়ে বিতর্ক, সেটি ২০১০ সালে নিয়ম মেনেই কেনেন রাজুবাবু। জমিতে তখন জল প্রায় ছিলই না। তারপরেই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আলাদা করে জলাশয় ভরাট করা হয়নি। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপর চট পেতে ও আড়াআড়ি ভাবে সাইকেল রেখে রাস্তা অবরোধ করেছেন গ্রামবাসীরা। একপাশে বসে আহত সাংবাদিক। তাঁর চোখে গুরুতর চোট লাগে। তাঁকে পরে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement