বাঁ দিকে, বাঁশ দিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে ট্রেন। ডান দিকে, ট্রেন না পেয়ে বাসেই বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে। ছবি: সুশান্ত সরকার।
প্রতিদিনই ট্রেন ‘লেট’ করে। সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয়। ক্ষোভ জমছিল নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। শুক্রবারও দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বৈঁচি স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন। এর জেরে ব্যস্ত সময়ে বিপর্যন্ত হল হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখায় রেল চলাচল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ চলে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় পরীক্ষার্থীদের। শেষে রেল ও জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
এ দিকে, অবরোধের জেরে বিভিন্ন স্টেশনের আপ ও ডাউন লাইনেই ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের নাকাল হতে হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় ছাত্রছাত্রীদের বেশি টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়েছে। ট্রেন না পেয়ে বাসেও ভিড় উপছে পড়ে। বৈঁচি স্টেশনে দাঁড়িয়ে লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক তরুণী বলেন, ‘‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা আছে। সময়ে পৌঁছতে না পারলে সমস্যা হবে।’’ উপায় না দেখে গাড়ি ভাড়া করে বর্ধমানের দিকে রওনা হন ওই ছাত্রী। অভিরূপ রায়চৌধুরী নামে সমবায় দফতরের এক অফিসার কোন্নগর থেকে মেমারি যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘জরুরি কাজ ছিল। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে শেষে গাড়ি ভাড়া করতে হল।’’
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, ৩৭৮২৮ ডাউন বর্ধমান-হাওড়া লোকাল বর্ধমান স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা সকাল ৮টা ২২ মিনিটে। বৈঁচি স্টেশনে ট্রেনটির ঢোকার নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিট। ১০টা ৩৮ মিনিটে হাওড়ায় পৌঁছনোর কথা। এই ট্রেনে পান্ডুয়া, বৈঁচি, সিমলাগড় থেকে বহু লোক প্রতিদিন কলকাতা-সহ নানা জায়গায় যান। নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, কার্যত কোনও দিনই ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে ঢোকে না। মাঝেমধ্যেই আধ ঘণ্টা-পৌনে এক ঘণ্টা ‘লেট’-এ আসে। তার পরেও ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য লাইনের মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে এক দিকে যেমন ব্যস্ত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়, তেমনি ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড় হয়। কার্যত বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়।
এ দিনও ট্রেনটি পনেরো মিনিট দেরিতে বৈঁচি স্টেশনে ঢোকে। তখনই যাত্রীরা রেল লাইনে নেমে পড়েন। লাইনের উপরে বাঁশ দিয়ে পথ আটকে দেন তাঁরা। জিআরপি এবং আরপিএফ ঘটনাস্থলে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পান্ডুয়া থানার পুলিশও চলে আসে। শেষে রেলের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, এর পর থেকে ট্রেনটি যাতে ঠিক সময়ে স্টেশনে ঢোকে এবং ছাড়ে সে ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পরেই দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘অবরোধের জন্য ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন হয়েছে। তবে কোনও ট্রেন বাতিল করতে হয়নি। যে বিষয় নিয়ে নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, তা মেটানোর জন্য আলোচনা চলছে।’’