ছেলেদের সঙ্গে খেলেই তেকাঠি ভেদ আদুরির

প্রায় দেড় দশক আগের কথা। ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি পিএজে ক্লাবের মাঠে চলছে খুদেদের ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেখানে একজনের খেলা দেখে উপস্থিত অতিথিরা আয়োজকদের বলছিলেন, ‘‘বাহ! এইটুকু ছেলে কী সুন্দর ডজ করছে দ্যাখো!’’

Advertisement

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

ময়দানে আদুরির প্র্যাকটিস।—নিজস্ব চিত্র।

প্রায় দেড় দশক আগের কথা। ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি পিএজে ক্লাবের মাঠে চলছে খুদেদের ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেখানে একজনের খেলা দেখে উপস্থিত অতিথিরা আয়োজকদের বলছিলেন, ‘‘বাহ! এইটুকু ছেলে কী সুন্দর ডজ করছে দ্যাখো!’’ শুনে মুচকি হেসে এক জন অতিথিদের ভুল শুধরে দেন, ‘‘ও ছেলে নয়, মেয়ে। এই এলাকায় মেয়েদের দল নেই, তাই ছেলেদের সঙ্গেই খেলছে।’’

Advertisement

অঙ্কুরহাটির সেদিনের একরত্তি মেয়েই আজ বাংলার মহিলা ফুটবল দলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা, আদুরি খাতুন। গত মরসুমে কলকাতা পুলিশের হয়ে খেলতে নেমেও নজর কেড়েছেন পেশায় গ্রিন পুলিশ বছর চব্বিশের আদুরি।

আদুরির কথায়, ‘‘আমার পরিবারের সবাই ফুটবল ভক্ত। দাদা ফুটবল খেলত। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন দাদার সঙ্গে মাঠে যেতাম। তখন থেকেই ফুটবল ভাল লাগে। তবে পরিবারের সবাই পাশে না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না।’’ বাড়ির পাশের পিএজে মাঠে অনুশীলন করতে করতেই বাগনানের একটি মহিলা ফুটবল দলে সুযোগ পান। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব ১৭ বাংলা দলে। এরপর অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দল হয়ে সিনিয়র বাংলা দলে। বার দুয়েক ভারতীয় ফুটবল দলের শিবিরেও ডাক পেয়েছিলেন রোনাল্ডিনহো’র ভক্ত আদুরি।

Advertisement

আদুরিকে কাছ থেকে দেখেছেন বাংলা মহিলা ফুটবল দলের কোচ হাওড়ারই মেয়ে রঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আদুরির দু’টি পা-ই সমান চলে। ওকে মাঝমাঠ থেকেও গোল করতে দেখেছি। কড়া ট্যাকেলে যেতে একদম ভয় পায় না।’’ আদুরির খেলার প্রশংসা করেছেন হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

আইএফএর মহিলা ফুটবলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা জানান, বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ খেলার পরে পরিবারের চাপে মাঠে আসা বন্ধ করে দিয়েছে—এরকম সংখ্যালঘু মহিলা ফুটবলারের উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি। ওই কর্তার স্বীকারোক্তি, সারা বছরে এক কলকাতা মহিলা ফুটবল লিগ ছাড়া নিজেদের প্রমাণের সুযোগই বা কোথায় ওদের!

তবু তারই মধ্যে আদুরি যেন বিছিন্ন দ্বীপের মতো। যাঁকে সামনে রেখে সত্যই স্বপ্ন দেখা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement