নিষেধ না মেনে চালকের দু’পাশেই যাত্রী। পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার।
প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়েই অটোতে ওঠা এখন দস্তুর হুগলিতে। একের পর এক দুর্ঘটনার পর এই সারসত্যই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। শুক্রবারেও চাঁপদানিতে অটো দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তিনজনকে।
বৈদ্যবাটিতে রোজ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যায় চুঁচুড়ার বাসিন্দা অমর প্রধানের মেয়ে। প্রায় এক বছর ধরে এই ব্যবস্থা চললেও সাম্প্রতিক অটো নিয়ে একের পর এক খবরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তিনি। জানালেন, বেআইনি অটো আর বৈধ অটোর ঝামেলা তো লেগেই রয়েছে। তার উপর বেপরোয়া অটোর জন্য যে ভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে তাতে মেয়েকে আর অটোয় পাঠাব কি না ভাবতে হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেলে চাঁপদানির দুর্ঘটনা সেই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ দিন বৈদ্যবাটি-অ্যাঙ্গাস রুটের একটি অটোর সঙ্গে পলতাঘাট এলাকায় উল্টোদিক থেকে আসা একটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। অটোর তিন যাত্রী গুরুতর জখম হয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে অটোতে তিনজন যাত্রী ছিলেন। কিন্তু সেটাই যে আসল ছবি নয় তাও জানেন ভুক্তভোগী নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, চারজনের বেশি যাত্রী নেওয়া নিষেধ থাকলেও অটোয় পাঁচজন বা তার বেশি যাত্রী নেওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ পুলিশ নির্বিকার। মাঝেমধ্যে যে ব্যবস্থা নেয় না তা নয়। তবে ফের যখন একই ছবি দেখা যায়, বুঝতে অসুবিধা হয় না পুলিশের থেকেও শক্তিশালী ‘কেউ’ আছে। যার জন্য অটোচালকেরা এতটা বেপরোয়া। খুশি মতো যাত্রী নেওয়া, রুট বদলে পছন্দমতো রুটে চলা এ সবই এখন জলভাত। যদিও পুলিশের দাবি, বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চলে। বাজেয়াপ্তও করা হয়। বেশি যাত্রী নেওয়া অটোর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হয়। কিন্তু পুলিশের এমন দাবিকে পাত্তা দিতে নারাজ যাত্রীরা। তাঁদের যুক্তি, ব্যবস্থা নেওয়া হলে এখনও একই সমস্যা থাকে কী করে!
ডিএসপি (ট্রাফিক) অরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বেআইনি অটো এবং টোটোর বিরুদ্ধে রুটিন মাফিক অভিযান চলে। মাঝেমধ্যে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও যৌথ অভিযান চালানো হয়। বেআইনি অটোও আটক করা হয়।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, অটোর বেশি যাত্রী বহন নিয়ে যাত্রীদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।
জেলার পরিবহণ দফতরের অধিকর্তা শুভেন্দু শেখর দাস বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে যত অবৈধ অটো চলছে তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শীঘ্রই এই অবৈধ যান বন্ধে ফের অভিযান চলানো হবে।’’ সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনের কথাও শোনা গিয়েছে পুলিশের একাংশের মুখে। তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে কড়া হলে তাঁদের কাজও অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। বেআইনি অটোর দাপটও কমে যাবে।
(শেষ)