বেদখল: জাতীয় সড়কেই পার্কিং ও বাজার বসে রানিহাটিতে। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়ক তো নয়, যেন মাছের বাজার! এত ভিড়!
কোথাও রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কারখানার পণ্য বোঝাই ট্রাক ঘিরে শ্রমিকদের ভিড়, কোথাও রাস্তায় বসা বাজারে ক্রেতাদের ভিড়, কোথাও আবার অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড়।
উলুবেড়িয়ার মহিষরেখা হোক বা সাঁকরাইলের রানিহাটি, কিংবা ডোমজুড়ের জঙ্গলপুর— হাওড়ায় মুম্বই রোডের এ ছবি প্রতিদিনের। যে রাস্তায় ‘টোল’ দিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলার কথা, সেখানে পদে পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে গাড়ি-চালকদের। ফলে, গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে গাড়ি-চালকদের। দুর্ঘটনাও ঘটছে।
২০১১-১২ সাল থেকে এই রাস্তাকে ছয় ‘লেনে’ পরিণত করার কাজ চলছে। জাতীয় সড়ক সংস্থার নিয়ম বলছে— এই রাস্তার দু’দিকে থাকবে ‘সার্ভিস’ রোড। বাস দাঁড়ানোর জন্য থাকবে ‘বাস বে’। কারখানা মালিকেরা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার বন্দ্যোবস্ত করবেন। কিন্তু ডোমজুড়ের নিবড়া থেকে শুরু করে কোলাঘাট পর্যন্ত জেলায় এই রাস্তায় ৯০ কিলোমিটারে এ সবের বালাই নেই।
মহিষরেখায় লোহার পাইপ তৈরির কারখানার সামনে সকালে গাড়ির ভিড় লেগে যায়। পণ্য ওঠানো-নামানো হয়। ফলে, কলকাতার দিকে যাওয়ার লেনের প্রায় অর্ধেক দখল হয়ে যায়। জঙ্গলপুরেও প্রচুর কারখানা রয়েছে। গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিল্পতালুকও। প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক এই সব কারখানা এবং শিল্পতালুকে ঢোকে। বহু ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে কলকাতা যাওয়ার ‘লেনে’। ফলে, যানজট প্রতিদিনের ঘটনা। রানিহাটিতে আবার রাস্তাতেই বাজার বসে। পাঁচলা, বাগনানে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড।
পুলিশ কী করছে?
গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, সমস্যাটি নিয়ে তাঁরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুম্বই রোডকে ছয় লেনে পরিণত করার কাজ শেষ না-হলে এই সব সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। এক পুলিশকর্তা জানান, জাতীয় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার কথা নয়। তা হলে গাড়ির গতি কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে উড়ালপুল এবং ফুট ওভারব্রিজ করা হলে যান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনই হয় না। তা না হওয়া পর্যন্ত যানজট মেটানো মুশকিল। এই সব কাজ শেষ হলে তবেই রাস্তার ধারে ট্রাক রাখার বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মুম্বই রোডকে ছয় লেনে পরিণত করার প্রকল্পে বেশ কয়েকটি উড়ালপুল এবং ফুট ওভারব্রিজ তৈরির কথা। তৈরি হওয়ার কথা সার্ভিস রোডও। কিন্তু জবরদখল হঠিয়ে সময়মতো জমি না-পাওয়া এবং পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যার জন্য কাজ শেষ করা যায়নি। তবে দ্রুত সেই চেষ্টা চলছে।
আপাতত বিরক্তি নিয়েই ওই রাস্তায় গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।