ধারাবাহিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে চন্দননগর পুরসভায় বড়সড় রদবদল করল তৃণমূল। দলের মেয়র পারিষদের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হল। শুক্রবার বিকেলে মন্ত্রী তথা দলের তরফে হুগলি জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন নতুন মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
চন্দননগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২৩টি। গত কয়েক মাস ধরেই সেখানে গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কাউন্সিলররা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। মেয়র রাম চক্রবর্তী এবং কয়েক জন মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের ১৫ জন কাউন্সিলর। অভিযোগ, এমন গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। এ নিয়ে একাধিক বার তৃণমূলের নানা স্তরে বৈঠক হলেও সমস্যা মেটেনি।
বুধবার পূর্ত দফতরের মেয়র পারিষদ অমিত ওরফে মুন্না অগ্রবালের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। দলীয় স্তরেও আগুনে ঘি পড়ে ওই ঘটনায়।
শুক্রবার কলকাতায় অরূপবাবু সকলকে নিয়ে বৈঠক করেন। অরূপবাবু ছাড়াও ছিলেন মন্ত্রী তথা দলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, অসীমা পাত্র, প্রবীর ঘোষাল, জেলা যুব সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রা। মেয়র রাম চক্রবর্তী-সহ অন্য কাউন্সিলররাও হাজির ছিলেন। তৃণমূল শিবিরের খবর, পুরসভার নেতৃত্ব নিয়ে মেয়রকে ভর্ৎসনা করা হয়। তবে রামবাবুকে মেয়রের পদ থেকে সরানো হয়নি।
বৈঠক থেকে ফিরে চুঁচুড়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তপনবাবুরা। সেখানে প্রবীর ঘোষাল জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচ মেয়র পারিষদ মু্ন্না অগ্রবাল (পূর্ত), অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায় (ক্রীড়া ও জল সরবরাহ), পীযূষ বিশ্বাস (জনস্বাস্থ্য ও দারিদ্র দূরীকরণ), জয়দেব সিংহরায় (পরিবহণ) এবং স্নিগ্ধা রায়কে (ত্রাণ ও পুনর্বাসন) সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, পার্থ চক্রবর্তী, হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়, নিত্যানন্দ ঘোষ, সবিতা দাস এবং অজয় ঘোষ নতুন মেয়র পারিষদ হচ্ছেন। অন্য মেয়র পারিষদ পার্থ দত্ত অবশ্য রয়ে গিয়েছেন। চেয়ারম্যান জয়ন্ত দাস এবং ডেপুটি মেয়র মায়া ঘোষের পদও বদল করা হয়নি।
তপনবাবু জানান, এ দিনই অনিমেষবাবুরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। নতুন মেয়র পারিষদরা সোমবার শপথ নেবেন। ওই দিনই তাঁদের দফতর ঘোষণা করা হবে।
তপনবাবুর কথায়, ‘‘দলের উর্ধ্বে কেউ নন। সেই বার্তাই দেওয়া হল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি, এ বার মানুষ ঠিকমতো পরিষেবা পাবেন।’’ যে কাউন্সিলররা ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন, তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘আমাদের জয় হল। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দল ঠিক ব্যবস্থা নিয়েছে।’’