ধৃত রঞ্জনা ও মৌসুমী পাল। ছবি: প্রকাশ পাল।
ঘটনার ১০ দিন পরেও অভিযুক্ত শাশুড়ি ও ননদকে কেন ধরা হচ্ছে না—এ নিয়ে রিষড়া থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মৃত পায়েল পালের পড়শিরা। তার কয়েক ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার হলেন শাশুড়ি-ননদ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাঁদের ধরা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে পায়েলের ৬ মাসের শিশুকন্যাকেও উদ্ধার করা হয়েছে। নাতনিকে ফিরে পেয়ে পায়েলের বাপের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, শিশুটিকে তাঁরা নিজেদের কাছেই রাখতে চান।
ধৃত মা-মেয়েকে এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম রোহিনী রাই তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ননদ মৌসুমী এবং শাশুড়ি রঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘আমরা নির্দোষ। যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সত্যি নয়। তদন্তে সব প্রমাণিত হয়ে যাবে।’’
গত ৬ অক্টোবর রিষড়ায় শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় নদিয়ার ধুবুলিয়ার মেয়ে পায়েলের। পুলিশের কাছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দাবি করেন, শৌচাগারের শাওয়ারের পাইপের সঙ্গে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পায়েল। তাঁরাই তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যান বলেও দাবি করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশু়ড়ি এবং ননদের বিরুদ্ধে রিষড়া থানায় খুনের লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন পায়েলের মা নমিতা হাজরা। অভিযোগ পেয়ে ওই রাতেই পায়েলের স্বামী কৃষ্ণেন্দু এবং শ্বশুর দীপক পালকে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, পায়েলের শাশুড়ি-ননদ ওই রাতেই তাঁর ৬ মাসের মেয়ে অঙ্গিরাকে নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার দশ দিন পরেও তাঁরা ধরা না পড়ায় সোমবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণেন্দুদের পড়শি মহিলারা রিষড়া থানায় বিক্ষোভও দেখান।
পুলিশ সূত্রে খবর, পায়েলের শাশুড়ি রঞ্জনা এবং ননদ মৌসুমী পাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় মোবাইলের টাওয়ার দেখে তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তদন্তকারী অফিসাররা। রাতেই পায়েলের বাপের বাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে রিষ়ড়া থানার একটি দল বারুইপুরে যায়। হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌরব লাল জানান, মঙ্গলবার ভোরে সেখান থেকেই মা-মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন পায়েলের বড়দি দোলা চৌধুরী বলেন, ‘‘অঙ্গিরাকে আমাদের কাছে রেখে বড় করে তুলতে চাই। যে পরিবার ওর মাকে মেরেছে, সেখানে পাঠাতে চাই না।’’ পুলিশ অবশ্য আইন মোতাবেক বাচ্চাটিকে হুগলি জেলা চাইল্ড লাইনের হাতে দিয়েছে। চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল জানান, নিয়ম অনুযায়ী আজ, বুধবার শিশুটিকে জেলা শিশুকল্যাণ কমিটিতে পেশ করা হবে। শিশুটির দেখভালের বিষয়ে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।