অশান্তি: এলাকায় উত্তেজনা থাকায় মোতােয়ন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী। নিহত শেখ ইসরাইল খান (ইনসেেট)।
এক বছরের ব্যবধানে আরামবাগের হরিণখোলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বোমাবাজিতে ফের প্রাণ হারালেন এক দলীয় কর্মী।
গত মঙ্গলবার থেকে শাসকদলের যুব এবং মূল সংগঠনের কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে হরিণখোলা বাজারে দু’পক্ষের একদফা মারপিট হয়। তারপর ঘোলতাজপুরে দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয় বলে পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় তৃণমূলের যুব সংগঠনের কর্মী শেখ ইসরাইল খানের (৩৬)। গুরুতর জখম হন তাঁর ভাই হাসিবুল। তাঁকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কিছু বাড়িঘর ও মোটরবাইক ভাঙচুরও হয়।
পুলিশ গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪০টি কৌটো-বোমা উদ্ধার করে। আতঙ্কে হরিণখোলা বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে হরিণখোলায় আরামবাগ-তারকেশ্বর রোড অবরোধ করেন তৃণমূল যুব সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের আশ্বাসে মিনিট কুড়ি পরে অবরোধ উঠলেও মৃতদেহ তুলতে বাধা দিয়ে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে বিকেল ৪টে নাগাদ মৃতদেহ তুলতে পারে পুলিশ।
এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস জানিয়েছেন, চার জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
বাড়ির কাছেই এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জেসমিনা বেগম এবং দাদা ইসমাইল তৃণমূলের মূল সংগঠনের নেতা তথা সংখ্যালঘু সেলের অঞ্চল সভাপতি শেখ তাইবুল আলি এবং তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। নিহত ইসরাইল মুথাডাঙায় জরির কাজ করতেন। তাঁর ৮ বছরের এক মেয়ে এবং ৬ বছরের এক ছেলে আছে। ইসমাইল বলেন, ‘‘আমরা হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আজিজ খানের (লাল্টু) নেতৃত্বে যুব সংগঠন করি বলেই ভাইকে খুন করল তাইবুল এবং ওর লোকেরা। ভাইকে বাড়ির কাছেই বোমা ছুড়ে মারল। এ দিন গুলিও চলে।”
অভিযোগ উড়িয়ে তাইবুলের দাবি, ‘‘ওদের নিজেদের ছোড়া বোমাতেই ওই ঘটনা। আজিজ খানের নেতৃত্বে ওই হামলায় আমার ভাই শেখ সাইফুলও বোমায় আহত হয়েছে। ওকেও আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজিজের লোকজন আমার ও দলীয় কর্মীদের বাড়িঘর এবং মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে।” আজিজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দল বিষয়টা দেখছে। দিনের আলোয় কী ঘটল, সাধারণ মানুষ দেখলেন।”
হরিণখোলা অঞ্চলে বারবার দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, খুন নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সমস্ত বিষয়টা জেনে দলকে জানাব। সংগঠনগত ভাবে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হলে নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করেই হরিণখোলা-১ ও ২ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কাজিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আগে মুণ্ডেশ্বরী নদীর বালিখাদ দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হত। এখন বালিখাদ বন্ধ হওয়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ জারি রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় মধুরপুর গ্রামে তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ মুক্তার শেখকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন যুব সংগঠনের আব্দুল আজিজ খান ওরফে লাল্টু এবং তাঁর লোকজন। লাল্টুকে গ্রেফতারও করা হয়। আবার ওই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত শেখ মফিজুলকে ২০১৯ সালের জুন মাসে হরিণখোলা বাজারে পিটিয়ে মারা হয়। সে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শেখ তাইবুল আলি। তাইবুলকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিন পান।