Howrah

ভয়াবহ দশা হাওড়ার ভূগর্ভ পথের, অবশেষে সংস্কারে উদ্যোগী প্রশাসন

সত্তরের দশকের শেষ দিকে তৈরি হওয়া হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন ভূগর্ভ পথ বা সাবওয়ের বর্তমান অবস্থা এমনই। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ব্যবহার করেন এই ভূগর্ভ পথ।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৬
Share:

নারকীয়: শৌচাগারের পাইপ ফেটে যাওয়ায় জল বেরিয়ে এখন এমনই অবস্থা হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ের।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ভাঙাচোরা সিঁড়ি। পলেস্তারা খসা দেওয়াল। বিভিন্ন জায়গায় মেঝে ফেটে চৌচির। এর উপরে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ফাটা দেওয়াল ও ছাদ চুঁইয়ে ঝরঝর করে জল পড়ে নীচে। নিকাশি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে হাঁটু সমান। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় দেওয়াল ও ছাদের সর্বত্র কালো কালো ছোপ। মান্ধাতার আমলের টিমটিমে আলোয় ভিতরে ঢুকলেই মনে হবে, এ যেন এক অন্ধকূপ!

Advertisement

সত্তরের দশকের শেষ দিকে তৈরি হওয়া হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন ভূগর্ভ পথ বা সাবওয়ের বর্তমান অবস্থা এমনই। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ব্যবহার করেন এই ভূগর্ভ পথ। কিন্তু, সেটির দশা এখন এতটাই খারাপ যে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনও দিন। ভূগর্ভ পথের হাল নিয়ে বহু অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত সংস্কারের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে, শেষমেশ ঘুম ভেঙেছে রাজ্য সরকারের। ওই ভূগর্ভ পথ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)-র সড়ক ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে সেই কাজ হবে। প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। অর্থের অনুমোদনও এসে গিয়েছে। এখন দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া চলছে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, মাসকয়েকের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। সব ঠিকঠাক চললে এ বছরের শেষ দিকে ওই ভূগর্ভ পথ নতুন রূপে দেখা যাবে।

কী কী সংস্কার করা হবে এই দেড় কোটি টাকায়?

Advertisement

কেএমডিএ-র সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ওই ভূগর্ভ পথের সমস্ত ফাটল মেরামত করা হবে, যাতে বৃষ্টি হলে ভিতরে জল না ঢোকে। সেই সঙ্গে বদলে ফেলা হবে মেঝের টালি। দেওয়ালের পুরনো টালিও খুলে নতুন টালি বসানো হবে। বদলে ফেলা হবে সমস্ত খারাপ আলো। নতুন করে রঙের প্রলেপ পড়বে ভূগর্ভ পথের ছাদে।

কেএমডিএ-র কর্তাদের অভিযোগ, ভূগর্ভ পথটির এতটা দুরবস্থার প্রধান কারণ, এর ভিতরে বসা বাজার। দিনের পর দিন বাজারের আবর্জনা জমে ভূগর্ভ পথের নিকাশি ব্যবস্থাকে প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে গত বছর কেএমডিএ-র পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে রেল, হাওড়া পুরসভা ও হাওড়া জেলা প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভূগর্ভ পথের নিকাশি পাইপলাইনটি হাওড়া স্টেশনের ভিতর দিয়ে গিয়ে গঙ্গায় পড়েছে। ওই নিকাশি পাইপলাইন দিয়ে রেলের জলও গঙ্গায় পড়ে। তাই ওই পাইপলাইন নিয়মিত সংস্কারের দায়িত্ব কেএমডিএ-র পাশাপাশি রেলেরও। সেই বৈঠকের পরে রেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্ষার আগেই ওই নিকাশি নালার সংস্কারের কাজ করা হবে। প্রয়োজনে নতুন একটি পাম্পিং পরিকাঠামোও তৈরি করা হবে। তা হলে আর বর্ষায় ভূগর্ভ পথের ভিতরে হাঁটুজল জমবে না।

হাওড়া স্টেশনের ভূগর্ভ পথটির আর একটি বড় সমস্যা হল, সেটির ভিতরে থাকা হাওয়া চলাচলের পথগুলি (ডাক্ট) সংস্কারের অভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই সেখান দিয়ে আর হাওয়া ঢোকে না। সেই কারণে গ্রীষ্মকালে ওই ভূগর্ভ পথে ঢুকলে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় মানুষের। কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ওই ভূগর্ভ পথের সংস্কারের পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নও হচ্ছে। খোলনলচে বদলে দেওয়া হবে। হাওয়া আসার পথগুলিও প্রয়োজন মতো মেরামত করা হবে। আশা করা যায়, দরপত্র প্রক্রিয়ার শেষে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement