উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরে ১১ফটক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকাকরণের জন্য লাইন। মানা হল না দূরত্ববিধি। ছবি: সুব্রত জানা
১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের সার্বিক টিকাকরণ মঙ্গলবারও চালু হল না হুগলিতে। ভ্যাকসিনের চাহিদার সঙ্গে জোগানের সমতা না থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত এই কর্মসূচি চালু করা যায়নি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তবে, ‘সুপার স্প্রেডার’ বলে চিহ্নিত শ্রেণির টিকাকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আঠারো পেরোলেই মিলছে ভ্যাকসিন।
হুগলির তুলনায় হাওড়ায় টিকাকরণের অগ্রগতি ভাল। মঙ্গলবারও জেলায় সব বয়সিদের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। ফুলেশ্বরের এগারো ফটক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যায়। ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষায় থাকা লোকজন বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। উলুবেড়িয়া পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে লাইনে থাকা লোকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলা হয়।’’
মঙ্গলবার উত্তরপাড়া পুর-এলাকায় ৪৪৩ জন ভ্যাকসিন পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯২ জন ছিলেন ‘সুপার স্প্রেডার’ তালিকাভুক্ত। পুরকর্তা সৌমেন ঘোষের বক্তব্য, ভ্যাকসিনের চাহিদার সঙ্গে জোগানের সমস্যা থেকে গিয়েছে। আগ্রহী সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না। পুর-প্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘এত দিনে মোট ২০,৬০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া গিয়েছে। এক লক্ষের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। জোগান না বাড়ালে কী করে হবে!’’ এ দিন উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৩০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ২০০ জন ছিলেন ‘সুপার স্প্রেডার’ তালিকায়। বাকিরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন। চাঁপদানি পুরসভার তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘সুপার স্প্রেডার’ বলে চিহ্নিত শ্রেণির ৭০০ জন ভ্যাকসিন পেয়েছেন।
আরামবাগ মহকুমায় ‘সুপার স্প্রেডার’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত আঠেরো বছর বয়সের ঊর্ধ্বে আমজনতার টিকাকরণ চালু রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত থেকে উপভোক্তার তালিকা পাঠানো হচ্ছে বিডিওকে। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিনের মজুত পরিমাণ জেনে তাঁরা সেই অনুযায়ী তালিকা পাঠাচ্ছেন। কবে টিকা দেওয়া হবে, তা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বা ফোনে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিক টিকাকরণ চালু না হওয়ার পিছনে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সমস্যার কথাও জানিয়েছেন একাধিক বিডিও। তাঁদের বক্তব্য, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ, দৈনিক ভ্যাকসিন মজুতের নিরিখে সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে আসা ৫০% এবং অনলাইনে নাম নথিভুক্তকারী ৫০% লোককে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু অনলাইনে নথিভুক্ত কত জন নির্দিষ্ট দিনে টিকা পাবেন, তা জানা বা জানানোর উপায় নেই। জটিলতা কাটাতে বৈঠক করেছে।
তারকেশ্বর, সিঙ্গুর, হরিপাল ও পান্ডুয়ায় টিকাগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতেও পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্যাকসিন আসছে না। তারকেশ্বরের পুর-প্রশাসক স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘সার্বিক টিকাকরণ চালু হয়নি।’’ গোঘাটের কামারপুকুর হাটতলার বাসিন্দা ১৮ বছরের দয়াশঙ্কর কুণ্ডুর অভিযোগ, ‘‘সোমবার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নিতে গেলে পঞ্চায়েতে নাম তোলার কথা বলা হয়। পঞ্চায়েত জানায়, এখন হবে না, অনেক নাম পাঠানো আছে।’’
হাওড়ায় সোমবার ২৯,৩৮৫ জন টিকা পেয়েছিলেন। মঙ্গলবার পেয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার মানুষ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সব বয়সিদেরই টিকা দিচ্ছি। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা লোকজনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’