Hooghly Car Accident

লকডাউনে কেনা গাড়িই কাল হল! উলুবেড়িয়ার দুর্ঘটনায় আর ফেরা হল না দুই শিক্ষিকার

লকডাউনের সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হল যখন, তখনই গাড়ি কিনেছিলেন বটানির শিক্ষিকা নন্দিনী ঘোষ। তার পর থেকে নিয়মিত কোন্নগর থেকে মেদিনীপুর যাতায়াত করতেন গাড়িতেই। সঙ্গে নিতেন সোদপুরের বাসিন্দা সহকর্মী মিশা রায়কে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কোন্নগর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ১১:৪৬
Share:

(বাঁ দিকে, উপরে) অধ্যাপিকা নন্দিনী ঘোষ, (বাঁ দিকে, নীচে) অধ্যাপিকা মিশা রায়। (ডান দিকে) দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। —নিজস্ব চিত্র।

দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। দু’জনেরই বয়স ৩০- এর কোঠায়। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। এক জনের বিষয় পরিবেশ আর একজনের উদ্ভিদ বিজ্ঞান। সোমবার সন্ধ্যায় এই দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায়। উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার কাছে জাতীয় সড়কের উপর মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁদের গাড়ি। সোমবার রাতেই সেই গাড়ির ভিতর থেকে তিনটি রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এল তাঁদের পরিচয়।

Advertisement

দুই শিক্ষিকার এক জনের বাড়ি কোন্নগরে। নাম নন্দিনী ঘোষ (৩৬)। মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বটানি পড়াতেন। যে গাড়িটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, সেটি তাঁরই কেনা। লকডাউনের সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হল যখন, তখনই কিনেছিলেন গাড়ি। তার পর থেকে নিয়মিত কোন্নগর থেকে মেদিনীপুর যাতায়াত করতেন গাড়িতেই। সঙ্গে নিতেন সোদপুরের বাসিন্দা সহকর্মী মিশা রায়কে (৩৩)। তবে নিজে গাড়ি চালাতেন না নন্দিনী। তাঁর গাড়ি চালাতেন কোন্নগরের বিশ্বজিৎ দাস (৩১)। সোমবার উলুবেড়িয়ায় ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দুর্ঘটনায় এই তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

প্রাক্তন আইপিএস অফিসাররের কন্যা নন্দিনী। বছর দশেক ধরে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্সটিটিউট থেকে বোটানি নিয়ে গবেষণা করেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে গবেষণার জন্য সম্মানও পেয়েছেন। প্রথমে তিনি শ্রীরামপুর কলেজে পড়াতেন। পরে গবেষণা শেষ করার পর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দেন। বাবা সুদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, নন্দিনী প্রতিদিন সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরোতেন। আর ফিরতেন রাত ৮টা নাগাদ। এত দূরের কর্মক্ষেত্র। তবু লকডাউনের সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে বাড়ি ছেড়ে সেখানে গিয়ে থাকেননি। কারণ, মাকে ছাড়া থাকতে পারতেন না। সেই জন্যই কিনেছিলেন গাড়ি। সোমবার সেই গাড়িতেই যথাসময়ে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন। বাড়ির গেটের সামনে বাবা এগিয়ে দিয়েছিলেন টিফিন বক্স। সেই দৃশ্য দেখেছিলেন প্রতিবেশীরাও। সহকর্মী মিশাকে নিয়ে এর পরেই রওনা হয়েছিলেন নন্দিনী। কিন্তু আর ফেরেননি।

Advertisement

নন্দিনীর বাবা জানিয়েছেন, বিকেল ৫টায় মেদিনীপুর থেকে বেরিয়ে মা স্বাগতা ঘোষকে ফোন করে জানিয়েছিলেন নন্দিনী। তার পরও মেয়ে ৮টার সময়ে বাড়ি না ফেরায় চিন্তা শুরু হয় তাঁদের। নন্দিনী, মিশা বা বিশ্বজিৎ কাউকেই ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবিরত বেজে যাচ্ছিল ফোন। ধরছিলেন না কেউই। এর পরেই লালবাজারে কয়েকজন পরিচিত অফিসারকে ফোন করেন সুদীপ। পরে উলুবেড়িয়া থানার সেকেন্ড অফিসার নন্দিনীর ফোনটি ধরেন। তিনিই দুর্ঘটনার খবর দেন। মেয়ের ফোনেই তাঁর মৃত্যুসংবাদ পান সুদীপ। একই সঙ্গে জানতে পারেন নন্দিনীর সহকর্মী এবং তাঁদের গাড়ির চালক বিশ্বজিতেরও মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়।

বিশ্বজিতের বাড়ি কোন্নগরের কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক্রবর্তী নগরে। মাত্র চার মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং মা ছিলেন। বিশ্বজিৎই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। আচমকা তাঁর মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়ে ওই পরিবারটিও।

অন্য দিকে, দুই শিক্ষিকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, দু’জনেই প্রোথিতযশা বিজ্ঞানী ছিলেন। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা মর্মাহত। রাতেই খবর পেয়েছিলাম। তার পরেই তিন জন অধ্যাপককে পাঠানো হয় উলুবেরিয়াতে। তবে এই ক্ষতি অপূরণীয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement