সিঙ্গুরে যানজট। ছবি: দীপঙ্কর দে
রাস্তায় গাড়ির সারি। কিন্তু ‘নট নড়নচড়ন’। কে বলবে, জাতীয় সড়ক!
রবিবার, পঞ্চমীর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ভাবেই থমকে থাকল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। প্রাণান্তকর অবস্থা হল সাধারণ মানুষের। গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েক গুণ বেশি ঘুরল
ঘড়ির কাঁটা।
এই পথে মোটা টাকা টোল দিতে হয়। এহেন রাজপথে এমন ভোগান্তিতে বিরক্তি চরমে ওঠে গাড়িচালক এবং আরোহীদের। দিন কয়েক ধরে এমন দুর্ভোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হুগলির ডানকুনি থেকে পূর্ব বর্ধমানের পালসিট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এই সড়ক চার লেনের। সমস্যা বেশি কলকাতামুখী লেনে। গুড়াপ, দাদপুর, সিঙ্গুর, চণ্ডীতলা, ডানকুনি— সর্বত্রই গাড়ি ধিকিধিকি এগিয়েছে। মাঝেমধ্যেই দাঁড়াতে হয়েছে। ডানকুনি টোল প্লাজ়ার দু’দিকে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে। ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি সামালানোর চেষ্টা করলেও বিশেষ লাভ হয়নি।
হাওড়ার আন্দুলের এক যুবক এই সড়ক ধরে দুর্গাপুর যাতায়াত করেন। ঘণ্টাতিনেক সময় লাগে। এ দিন দ্বিগুণ সময় লেগেছে। যুবকের কথায়, ‘‘প্রচুর জ্যাম ছিল। আরও ফাঁসতে পারি বুঝে সিঙ্গুর থেকে দিল্লি রোডে গাড়ি ঘুরিয়ে নিই। না হলে আরও কয়েক ঘণ্টা লাগত।’’ ইলামবাজার থেকে ট্রাকে বালি নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার পথে বেলা ২টো নাগাদ ডানকুনি টোল প্লাজ়ার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ রেজাউল। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘সিঙ্গুরে ঢুকেছি সকাল ১০টা নাগাদ। এত ক্ষণে এখানে এলাম।’’ ১৫-১৬ কিলোমিটার ওই দূরত্ব পেরোতে মিনিট কুড়ি লাগার কথা।
কেন এই অবস্থা?
পুজোর জন্য দুপুর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ট্রাকের ‘নো-এন্ট্রি’ থাকছে। ‘নো-এন্ট্রি’ উঠলে হাজার হাজার ট্রাক কলকাতার দিকে যাচ্ছে। পুলিশের একাংশের দাবি, ঠাকুর দেখতে কলকাতায় যাওয়ার হিড়িকে সকাল থেকে বহু গাড়ি নামছে। ট্রাক, সাধারণ সময়ের যানবাহন এবং ওই সব গাড়ি মিলিয়ে জট পাকিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সময়ে কলকাতামুখী ট্রাক সন্ধ্যায় ছাড়া হয়।
এ দিন বেলা ২টোর পরে ‘নো-এন্টি’ শুরু হতে যানজট কাটে। পুলিশের একাংশের দাবি, আজ থেকে বহু অফিস-কাছারিতে পুজোর ছুটি পড়বে। ফলে, গাড়ির পরিমাণ কিছুটা কমবে। যানজটও কমবে।
গাড়িচালকদের ক্ষোভ, এই সড়কে প্রায়ই যানজট হয়। রাস্তা জুড়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। ডানকুনির দিকে গাড়ির গতি মন্থরতার কারণ হিসেবে অনেকে বালির মাইতিপাড়ায় সঙ্কীর্ণ রেলসেতুকে দায়ী করছেন। এই রাস্তা দিয়ে হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন দিকে যাওয়া যায়। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘একাধিক রাস্তা মাইতিপাড়ায় মিশছে। সেতুটির অবস্থা অনেকটা মাইকের পিছনের মতো সরু।’’ সেতুর সঙ্কীর্ণ লেনে পাশাপাশি দু’টি বড় গাড়ি চলা কঠিন।
সমস্যা সমাধানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই সড়ক ছয় লেনের করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সম্প্রসারণ যত দিন না হচ্ছে, তত দিন সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না বলে সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করছেন।