আসীন: ব্যাঙ্কে অসিতবাবু। নিজস্ব চিত্র।
বোর্ড অব ডিরেক্টরর্স-এর মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত বছর আগে। শেষে, হুগলি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করল রাজ্য সরকার। তবে, সরকারি আধিকারিক নন, ওই পদে বসলেন শাসক দলের চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। বৃহস্পতিবার তিনি দায়িত্ব নেন। বিরোধীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ব্যাঙ্কে শেষ বার নির্বাচন হয় ২০১১-তে। গত সোমবার রাজ্যের তরফে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম সামলানো এবং নতুন নির্বাচিত বোর্ড অব ডিরেক্টরর্স গঠনের দিকে তাকিয়ে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজ্যের সমবায় আন্দোলনের স্বার্থের কথাও উল্লেখ করা হয়।
দায়িত্ব নিয়ে অসিতবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সেই চেষ্টাই করব। এটি কৃষক এবং গরিব মানুষের স্বার্থরক্ষার ব্যাঙ্ক। সেটা আমরা করব। বেনামী অ্যাকাউন্ট থাকলে ধরার চেষ্টা করব। কোনও বেনামী অ্যাকাউন্ট থাকবে না।’’
এত দিন নির্বাচন হয়নি কেন, বিরোধীরা সেই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভরশীল বহু কৃষক বা মেহনতি মানুষ ঠিকমতো পরিষেবা পান না। মুখে নির্বাচনের কথা বলা হলেও নানা অছিলায় বিলম্ব করা তৃণমূলের আমলে ‘নিয়ম’ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় অবিলম্বে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
জেলা জুড়ে এই ব্যাঙ্কের বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে। হুগলি জেলা কৃষকসভার সম্পাদক ভক্তরাম পান বলেন, ‘‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে সব ক্ষেত্রেই নিজেদের লোক বসিয়ে দলীয় দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করেছে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকার। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।’’ ওই কৃষক সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, কৃষক, সাধারণ মানুষের টাকা এই ব্যাঙ্কে রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে কৃষকদেরই ব্যাঙ্ক পরিচালনার কথা। তার বদলে শাসক দলের ঠিক করে দেওয়া লোক ছড়ি ঘোরালে মানুষজন আশঙ্কিত হন। ভক্তরামবাবুর কথায়, ‘‘দখলদারির এই মনোভাব গণতন্ত্রের পক্ষে অশনিসঙ্কেত।’’
বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘সাত বছর ধরে ভোট করানো গেল না কেন, সেই জবাব শাসক দল দেবে? এখানে আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে। শাসক দল যা খুশি তা-ই করছে।’’
সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের একাংশের বক্তব্য, বর্তমানে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যই সমবায় দফতরের অধীন রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে, সমবায় ব্যবস্থার কাঠামোর উপরে তার প্রভাব পড়ছে। সেই কারণে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরাও।