—প্রতীকী চিত্র।
গত এক মাসের মধ্যে দু’বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে হাওড়ার দুই এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষকরা। শিক্ষকদের মারের হাত থেকে রক্ষার জন্য কড়া আইনের পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।
গত ১৮ অগস্ট পাঁচলা গার্লস হাই মাদ্রাসায় হামলা চালান গ্রামবাসী এবং অভিভাবকদের একাংশ। প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি থানায় জানালে স্থানীয় বিধায়কের হস্তক্ষেপে সমস্যাটি মিটে যায়। হামলাকারীরা প্রধান শিক্ষিকার কাছে ক্ষমা চান।
এরপরের ঘটনা গত সোমবারের। শ্যামপুরের নয়দা নয়নচাঁদ বিদ্যাপীঠে টিফিনের সময়ে দুই অভিভাবক ইংরেজির শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করে। ধরা পড়েছে দু’জন।
দুটি ক্ষেত্রেই হামলার কারণ আলাদা। পাঁচলা গার্লস হাই মাদ্রাসায় হামলার কারণ ছিল, সেখানে এখানে পরিচালন সমিতি গঠন না করা। আবার শ্যামপুরের ঘটনার কারণ ছিল, শিক্ষকের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির ছাত্রকে শাসনের অভিযোগ।
কারণ যাই হোক, স্কুলের ভিতরে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর করার ঘটনা যে ভাবে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত শিক্ষকদর একটা বড় অংশ। সমাজে শিক্ষকদের একটা শ্রদ্ধার জায়গা আছে। সেখানে তুচ্ছ অজুহাতে যেভাবে এক শ্রেণির অভিভাবক এবং গ্রামবাসী শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলছেন তাতে কী সেই শ্রদ্ধার জায়গা কিছুটা হলেও টাল খেয়েছে? শিক্ষকদের একাংশের দাবি, বিষয়টিতে এখনই হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শঙ্কর খাঁড়া বলেন, ‘‘এখন পড়ুয়াদের গায়ে হাত তোলা বেআইনি। ফলে তাদের শাসন করা যাচ্ছে না। তারই সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির অভিভাবক। অবাধ্য ছাত্রকে শিক্ষক অনন্যোপায় হয়ে হয়তো কিছুটা শাসন করলেন। সে বাড়িয়ে অভিভাবকদের বলল।
ব্যস তাঁরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শিক্ষকের উপরে।’’
পাঁচলা গার্লস হাই মাদ্রাসায় পঠন-পাঠন বহির্ভূত ঘটনা ঘিরে শিক্ষকদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। পাঁচলা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা সাধনা বর্মন বলেন, ‘‘শিক্ষকদের আচরণ সাধারণত ভদ্র ও মার্জিত হয়। সেটাকে দুর্বলতা ভেবে হামলা চালানো হচ্ছে।’’ বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের নেতা পিন্টু পাড়ুই নিজে আমতার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, "পঠন-পাঠনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন একটা তুচ্ছ কারণে আমার উপরে হামলা হয়। আসলে শিক্ষক সমাজ হল নরম মাটি। তাই সেখানে আঁচড় কাটা সহজ। এর বিরুদ্ধে আইন দরকার।’’
একই মত দিয়েছেন সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-এর নেতারাও। এই সংগঠনের জেলা নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘একটা সময়ে তুচ্ছ কারণে চিকিৎসকদের মারধর করা হত। এখন লক্ষ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। কঠোর আইন করা দরকার শিক্ষকদের মারধরের ক্ষেত্রে।’’
শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদ করলেও এটা আটকাতে আলাদা আইন দরকার আছে বলে মনে করে না তৃণমূল প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন। সংগঠনের জেলা নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘শিক্ষকদেরও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা দূর করতে হবে।’’ তবে তাঁর সংযোগন, ‘‘শিক্ষক নিগ্রহ বরদাস্ত করা হবে না। কঠোর আইনি ব্যবস্থার দাবি তুলেছি আমরাও।’’