School at Ayodhya Hill

অযোধ্যা পাহাড়ে গণ-উদ্যোগের স্কুলকে স্বীকৃতি শ্রমজীবীর

নন্দন, অজিতরা জানান, সেখানকার রুখু মাটিতে বছরে এক বার চাষ হয়। পেট চালাতে কেউ পশুপালন করেন, কেউ জঙ্গলেকাঠ কেটে বেচেন। পড়ুয়ারাআদিবাসী মূলবাসী।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৪
Share:

চলছে পড়া। নিজস্ব চিত্র।

ছবিটা বদলে গিয়েছে গণ-উদ্যোগে। অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে গ্রাম। দূরে স্কুল। প্রায় এক যুগ আগেও পথ ভেঙে স্কুলে যাওয়া হত না বহু ছেলেমেয়ের। অভাবী মুলুকে অভাব ছিল সচেতনতারও। মতিলাল হেমব্রম, নন্দন হেমব্রম, অজিত মুর্মু, রামপদ সরেনের মতো কিছু যুবক ঠিক করেছিলেন, সব ছেলেমেয়েকে স্কুলে আনতে হবে। ২০১০ সালে পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডির সাহারজুড়ির বঙ্গাদায় স্কুল চালু করে ফেলেন তাঁরা। স্কুল বলতে, মাটির একটি ঘর। পরে আরও দু’টো ঘর হয়। শুরুতে ২০-২২ জন পড়ুয়া ছিল। ’১৬ সাল থেকে পড়ুয়াদের থাকার ব্যবস্থাও হয়। এখন পড়ুয়া শতাধিক। প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি। আবাসিক জনা সত্তর। ১১ জন শিক্ষক, এক শিক্ষিকা। অবৈতনিক। গত কয়েক বছরে আশপাশের বহু ছেলেমেয়েকে শিক্ষার আঙিনায় এনেছে এই গণ-উদ্যোগ।

Advertisement

স্কুলের নাম ‘বঙ্গাদা বিদু-চান্দান বিদদাগাঢ়’। এই প্রতিষ্ঠানকে অনন্য মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ‘সুদক্ষিণা লাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দিল শ্রমজীবী হাসপাতাল। সম্প্রতি হুগলির শ্রীরামপুরে হাসপাতাল ভবনে বিদদাগাঢ়ের শিক্ষক অজিত ও নন্দনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তথা কলেজ-শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নন্দন, অজিতরা জানান, সেখানকার রুখু মাটিতে বছরে এক বার চাষ হয়। পেট চালাতে কেউ পশুপালন করেন, কেউ জঙ্গলেকাঠ কেটে বেচেন। পড়ুয়ারাআদিবাসী মূলবাসী। প্রায় সকলেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। কয়েক জন এখান থেকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছে। বাকিদের নাম আছে সরকারি স্কুলের খাতায়। এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া কেউ কেউ কলেজে পড়ছেন।

Advertisement

পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর নন্দন চাষ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ অজিতও চাষি। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, পাহাড়ে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে। প্রকৃতি-পরিবেশ বাঁচিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের উপায় শিক্ষার মাধ্যমে খোঁজা দরকার। চর্চার অভাবে আদিবাসী সংস্কৃতি নিয়ে উদাসীন নতুন প্রজন্ম। স্কুলে পড়াশোনা, খেলাধুলোর পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা, পরিবেশের পরিচর্যা করে খুদেরা।

অজিত বলেন, ‘‘মানুষ পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা বুঝছেন। স্কুলের ঘর তৈরির সময় অনেকে শ্রমদান করেছেন। পড়ানোর জন্য কিছু টাকা, চাল নেওয়া হয়। যাঁরা দিতে পারেন না, তাঁদের কেউ শ্রমদান করেন। কেউ আনাজ বা কেরোসিন দিয়ে সাহায্য করেন।’’

নন্দনের কথায়, ‘‘শ্রমজীবীর দেওয়া সম্মান আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল।’’ সঞ্চালক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘শাল-পলাশে ছাওয়া তল্লাটে ওই স্কুল না-থাকলে আজও হয়তো অসংখ্য ছেলেমেয়ে অক্ষরহীন থেকে যেত। গিয়ে দেখেছি, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা রয়েছে। অথচ, কঠোর অনুশাসন নেই।’’ দু’টি পাকা ঘর তৈরি হচ্ছে স্কুলের। তবে, দ্রুত কাজ শেষে বাধা অর্থ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement