উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চলছে টিকাকরণ। সোমবার। ছবি: সুব্রত জানা।
চেনা আবহে সোমবার, দ্বিতীয় দফায় কোভিড-টিকাকরণ হল হাওড়ায়। কিন্তু মোট কত জনকে টিকা দেওয়া হল, সেই ছবি স্পষ্ট হল না রাত পর্যন্ত। এ জন্য ‘কো-উইন অ্যাপ’ অকেজো হয়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস জানিয়েছেন, ৫০ শতাংশের টিকাকরণ হয়েছে। কিন্তু একাধিক টিকাকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসারদের দাবি, সেখানে ১০০ শতাংশের টিকাকরণ হয়েছে। ফলে, দু’রকম পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তি কাটছে না।
গত শনিবার, প্রথম দফায় এই জেলায় ৯৫ শতাংশ টিকাকরণ হয়। দ্বিতীয় দফায় টিকাকরণ ১০০ শতাংশ করার লক্ষ্যেই নেমেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু অ্যাপ-বিভ্রাটে সেই কাজ ব্যাহত হল।
ঠিক কী হয়েছিল?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে যে সব গ্রহীতার নাম স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়, তাঁদের নাম তোলা হয় ওই অ্যাপে। সেইমতো কেন্দ্রগুলির (জেলায় ৮টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হয়) ভারপ্রাপ্ত নোডাল অফিসাররা এ দিন টিকা নেওয়ার জন্য রবিবারই ফোনে জানিয়ে দেন ১০০ জন গ্রহীতাকে। গ্রহীতারা হাজিরও হন। কিন্তু সকালে মিনিট কুড়ি অ্যাপটি চালু ছিল। পরে বারবার চালু হয় এবং বন্ধ হয়। ফলে, বহু গ্রহীতার সঙ্গে থাকা নথিপত্র অ্যাপে থাকা তথ্যের সঙ্গে যাচাই করা যায়নি। অনেকে অপেক্ষা করে ফিরে যান। বাকিদের কারও কারও ‘অফলাইনে’ নাম তুলে টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়াও খুব একটা কাজ করেনি। অ্যাপে নাম দেখতে না-পেয়ে অনেকে টিকা নিতে বেঁকে বসেন।
‘অফলাইনে’ টিকাকরণের হিসেব মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে শুধুমাত্র অ্যাপে টিকাপ্রাপকদের হিসাবটাই আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এ দিন মাত্র ৫০ শতাংশের টিকাকরণ হয়েছে। বাকি যাঁদের টিকা দেওয়া হয়েছে, তার কোনও তথ্য আমার কাছে নেই।’’
এই ‘অফলাইনের’ হিসেবকেই ১০০ শতাংশ দেখাচ্ছেন বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রের নোডাল অফিসাররা। যেমন, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার তথা এই টিকাকরণ কেন্দ্রের নোডাল অফিসার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ারের দাবি, ‘‘অ্যাপ বসে যাওয়ায় যখন দেখলাম সকলকে টিকা দেওয়া যাচ্ছে না, তখন আমরা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদেরই ডেকে এনে টিকা দিই। অফলাইনে তাঁদের নাম লিখে রেখেছি। পরে সুবিধামত অ্যাপে তুলে দেওয়া হবে। এখানে
সব মিলিয়ে ১১০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।’’
একই সুরে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালের টিকাকরণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার শেখ সানাউল্লারও দাবি, ‘‘আমার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গিয়েছে।’’
তবে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, অ্যাপে যে ১০০ জনের নাম এ দিনের টিকাকরণের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তার বাইরে অনেককে টিকা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হলেও তথ্য বিভ্রাটের আশঙ্কা থাকছে।