সুরক্ষা: মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছেন এক ফুটপাতবাসী। হাওড়া পুরসভার কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ডেঙ্গির চোখরাঙানি ছিলই। তার সঙ্গে এ বার সমানে সমানে পাল্লা দিচ্ছে আর এক মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া। হাওড়া পুরসভা এলাকায় এই যুগলের আক্রমণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পতঙ্গবিদেরা। জেলাস্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাস পর্যম্ত বালি এবং হাওড়া মিলিয়ে ম্যালেরিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা শতাধিক। যার মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। পিছিয়ে নেই ডেঙ্গিও। জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাওড়া ও বালি মিলিয়ে ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬০টিতে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হাজারেরও বেশি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, মাঝেমধ্যে হওয়া বৃষ্টির জন্য গত এক মাসে হাওড়ায় কার্যত উল্কার গতিতে বেড়েছে ডেঙ্গি। ইতিমধ্যেই এই রোগে মারা গিয়েছেন তিন জন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে হাওড়ার কয়েকটি ওয়ার্ডে সীমাবদ্ধ ছিল এই রোগ। কিন্তু বর্তমানে হাওড়া ও বালি মিলিয়ে ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬০টি ওয়ার্ডে থাবা বসিয়েছে সে। একমাত্র ২২, ২৪, ২৫, ২৮, ৩২ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও পর্যন্ত কেউ সংক্রমিত হননি। তবে পতঙ্গবিদদের আশঙ্কা, মানুষ অবিলম্বে সচেতন না হলে এই ওয়ার্ডগুলিতেও ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়তে আর দেরি নেই।
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, হাওড়া পুর এলাকার আওতাধীন ৫০টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি দেড় শতাধিক রোগী। বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ভর্তি ৩২৫ জন। অন্য দিকে, বালির ১৬টি ওয়ার্ডে সংক্রমিতদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোম মিলিয়ে ৪২০ জন চিকিৎসাধীন। হাওড়া জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সেখানে জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ জন। ওই হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ছবিটা খুবই উদ্বেগজনক। অবিলম্বে মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।’’
ডেঙ্গির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলছে ম্যালেরিয়ার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণও। সূত্রের খবর, মধ্য হাওড়ার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই রোগেআক্রান্তের সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া পুরসভার সংযুক্ত এলাকা, ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও পর্যন্ত ৫-৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। নরসিংহ দত্ত রোড এলাকায় ইতিমধ্যে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। হাওড়া পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে তিন-চার করে ম্যালেরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। অন্য দিকে, বালি এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তেরসংখ্যা প্রায় ১০।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে তিনিব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি দল গড়ে প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দলে থাকবেন জঞ্জাল অপসারণ দফতরের সুপারভাইজ়ার, পুর স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক,স্প্রে-ম্যান সহ সাফাই দফতরের কর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আগামী তিন সপ্তাহ আমি নিজে সকাল থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখব। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন থেকে সাতটি বরোয় সাত জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়েছে। তাঁরাও এই দলে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মতামত জানাবেন।’’