প্রতীকী ছবি।
এ দাদা বা দিদি নয় এক্কেবারে 'বাপ'। তাতেই মিলল সমাধান সূত্র তারপর ‘বাপে’র দেওয়া সমাধান সূত্র ধরেই কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পরে চাকরিটা পেল হারাধন। সপ্তাহ দু'য়েক আগে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন হারাধন ঘোষ। যদিও হারাধনের চাকরির জন্য কম লড়াই করেননি তার প্রতিবেশী পেশায় শিক্ষক মহম্মদ সেবলু ও এক পড়ুয়া ইমরান আলি।
ভগবানগোলার বাগডাঙার বাসিন্দা হারাধনবাবু। স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁর বাবা রোহিণীকুমার ঘোষ কলকাতা পুলিশের হেড কনস্টেবল ছিলেন ১৯৯৫ সালে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যু হয় রোহিণীকুমার ঘোষের। কাজেই স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর চাকরি ছেলেকে দেওয়ার জন্য ১৯৯৭ সালে আবেদন জানান হারাধনবাবুর মা শান্তিলতা ঘোষ৷ তারপর কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর।
হারাধন বাবুর দাবি, চাকরি পাওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশের একাধিক আধিকারিক জন প্রতিনিধি কার কাছে না ঘুরেছেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। শেষমেশ মা স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে শুরু করেন দিনমজুরি করতে।
অবশেষে হারাধনবাবুর বিষয় নিয়ে ফেসবুকের একটি পেজ 'বাপ কে বলো' তে লেখেন হারাধন বাবুর প্রতিবেশী মহম্মদ সেবলু। আর সেখান থেকেই হাতে নাতে মিলল সমাধান। সেবলু জানান, পেজ থেকে তাঁদের কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তথা এডিজি আইবি অনুজ শর্মার নম্বর দেন তারা। তারপর বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হয় অনুজ শর্মাকে তিনি আরেক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তারপর রাজ্য স্তরের একাধিক আধিকারিক ও আমলাদের সঙ্গে দেখা করার পর মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে চাকরি মেলে হারাধনের।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছে হারাধন তারপর কাজে যোগও দিয়েছে সে। এদিন মহম্মদ সেবলু বলছেন, "ফেসবুকে 'বাপকে বলো' পেজের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল কারণ একবার আমাদের গ্রামের বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল ওই পেজে আমি লিখেছিলাম ওরা একটা নম্বর দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগের সেখানে কথা বলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল। তারপর হারাধনের বিষয়টা আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পেজে লিখলাম তারপর তো ওরাই সমাধান সূত্র বের করে দিল একাধিক আধিকারিক ও আমলাদের নম্বর তাদের কিভাবে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে সবই ওই পেজ করেছে।"
এদিন হারাধন বাবু বলেন, "বাপকে বলো পেজ আর সেবলু দা আর ইমরান আমাকে যে ভাবে সাহায্য করল নিজের লোকও এত করেনা। আর সব থেকে বড় বিষয় হল সরকারি আধিকারিকরা যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে আমার বিষয়টি দেখলেন তাতে উনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকলাম। একটা সময় তো মনে হয়েছিল চাকরিটা আর পাবোই না।"
মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের সুপার ডাক্তার অমিয় কুমার বেরা বলেন, "চতুর্থ শ্রেণিতে প্রিন্সিপাল অফিসে কাজ পেয়েছেন হারাধন বাবু। বেশ বয়সও হয়েছে প্রায় ৩৫। এর পুরো ক্রেডিট সিএমওএইচের উনিই ফাইলটা চালাচালি শুরু করেন। তারপর পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে ছিল তারপর সপ্তাহ দুয়েক আগে চাকরি পেয়েছেন।"
ওই ফেসবুর পেজ বাপকে বলো-র এক উদ্যোক্তা কলেজ পড়ুয়া মহম্মদ সেলিম রেজওয়ান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতেই এই উদ্যোগ। আমরা চাই না কেউ দালালের হাতে পড়ুন। এই ঘটনাটি বড় সাফল্য।’’