চাকরি বাতিলের আঁচ পড়া শুরু বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই
Arambagh

বিজ্ঞান বিভাগ উঠে যাবে, আশঙ্কা স্কুলের

প্রধান শিক্ষকের আক্ষেপ, ‘‘একাদশ-দ্বাদশের তিন শিক্ষকেরই চাকরি গিয়েছে। বাণিজ্যের মতো এ বার বিজ্ঞান বিভাগও তুলে দিতে হবে।’’

Advertisement

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৯
Share:
অস্থায়ী কর্মী প্রদীপ ঘোষ পরীক্ষার রুমে ‘গার্ড’ দিচ্ছেন। আরামবাগের ডিহিবাগনান কে বি রায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

অস্থায়ী কর্মী প্রদীপ ঘোষ পরীক্ষার রুমে ‘গার্ড’ দিচ্ছেন। আরামবাগের ডিহিবাগনান কে বি রায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

সিঁদুরে মেঘ দেখছে আরামবাগের ডিহিবাগনান কে বি রায় উচ্চ বিদ্যালয়!

Advertisement

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকায় ঘণ্টা বাজানোর অভ্যাস ২০২২ সাল থেকেই করে ফেলেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষকের অভাবে ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাণিজ্য বিভাগ। এ বার ৭ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগ উঠে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, চাকরিহারাদের মধ্যে রয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা এবং অঙ্কের শিক্ষক। বাকিরা হলেন মাধ্যমিক স্তরের দু’জন ইতিহাস এবং ইংরেজি ও অঙ্কের এক জন করে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ২১ থেকে কমে ১৪ হল। পড়ুয়া হাজারের বেশি।

প্রধান শিক্ষকের আক্ষেপ, ‘‘একাদশ-দ্বাদশের তিন শিক্ষকেরই চাকরি গিয়েছে। বাণিজ্যের মতো এ বার বিজ্ঞান বিভাগও তুলে দিতে হবে।’’

Advertisement

পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। ওই ৭ শিক্ষক শুক্রবার স্কুলে আসেননি। পরীক্ষা চালাতে রীতিমতো সমস্যায় পড়লেন কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি ঘরে স্কুলের অস্থায়ী কর্মীদেরও ‘গার্ড’ দিতে দেখা গেল। সবাইকেই কাজ করতে হল ‘বিরামহীন’ ভাবে। পড়ুয়াদের খাতা দেওয়া, অতিরিক্ত পাতা সরবরাহ ইত্যাদি নিয়ে কার্যত ছোটাছুটি চলল। টিচার ইনচার্জ শুভেন্দু আদক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখনই টের পাচ্ছি। ১৩ তারিখ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরুর কথা। পড়ানো, পরীক্ষার খাতা দেখা কী করে সামাল দেওয়া যাবে, ভেবে পাচ্ছি না।’’ তিনি জানান, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার খাতা দেখে রেজ়াল্ট ১৯ এপ্রিলের মধ্যে বাংলা শিক্ষা পোর্টালে তোলার কথা। সেই খাতা দেখবেন যাঁরা, তাঁরাই ‘নেই’। প্র্যাকটিক্যাল খাতাও দেখা হয়নি।

এক শিক্ষকের বক্তব্য, ওই সাত জনের পরিবর্তে সব ক্লাসে শিক্ষক দেওয়ার উপায় থাকবে না। ফলে, সেই সময় ছাত্রদের নিয়ে খেলাতে হবে, নইলে ক্লাস বন্ধ যাবে। শিক্ষকদের চিন্তা, বহু পড়ুয়ার পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। তাদের পক্ষে গৃহশিক্ষক রাখা সম্ভব নয়। ওই ছাত্রছাত্রীরা মূলত স্কুলের পড়াশোনার উপরেই নির্ভরশীল। ফলে, স্কুলে ক্লাস না হলে তারা বিপাকে পড়বে।

সাধারণত পরীক্ষার হলে ‘ডিউটি’ করতে হয় না প্রধান শিক্ষকদের। আর পাঁচটা কাজের পাশাপাশি এ দিন বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঙ্গেস হাই স্কুলের (হিন্দি মাধ্যম) প্রধান শিক্ষক বিশাল তিওয়ারিকে সেই দায়িত্বও সামলাতে হয়েছে। এই স্কুলে ১৫ জনের চাকরি যাওয়ায় শিক্ষক সংখ্যা এক ধাক্কায় ২৬ জনে নেমে এসেছে। তাঁদের মধ্যে ৪ জন এ দিন ছুটিতে ছিলেন। সব মিলিয়ে পরীক্ষা পরিচালনায় হিমশিম খেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই স্কুলে প্রায় ২৩০০ ছাত্রছাত্রী।

সকাল ১১টা থেকে দুই ধাপে বিকেল ৪টে পর্যন্ত পরীক্ষা চলে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আজ সবাই ক্লান্ত। স্কুলের অফিসের কাজ, পরীক্ষা, সর্বোপরি এত পড়ুয়াকে সামলানো সত্যিই দুষ্কর ব্যাপার! এ ভাবে কত দিন চালাতে পারব, জানি না।’’

বলাগড়ের সরগড়িয়া আদিবাসী হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। টিচার ইনচার্জ শুভদীপ পাল বলেন, ‘‘১৭০ জন পড়ুয়া। তিন জন স্থায়ী শিক্ষক। চার জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পড়ান। ‘গ্রুপ ডি’ হলেও ইতিহাসে অনার্স থাকায় ওই কর্মী মাঝেমধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাসও নিতেন। সেটা আর হবে না।’’

তথ্য সহায়তা: সুদীপ দাস ও বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement