শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়। —ফাইল চিত্র।
ভেলো। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আদরের পোষ্য। কারও তাকে কুকুর বলার জো ছিল না। তাকে শরৎ ভাবতেন, নিজের সন্তান। হাওড়ার বাজে শিবপুরের জীবনে ভেলো এসেছিল কথাশিল্পীর জীবনে। এমনিতেই তিনি কুকুর-বিড়াল, পাখিদের প্রতি দুর্বল ছিলেন। কাশী বেড়াতে গিয়ে ব্রাহ্মণ ভোজনের বদলে কয়েক হাজার লুচি আর বোঁদে বানিয়ে পথ-কুকুরদের ভোজ দিয়েছেন, এমনও ঘটেছে।
ভেলো ‘যমুনা’ পত্রিকার অফিসে রোজ কাটলেট খেতে যেত। একদিন শরৎচন্দ্রের সঙ্গে কথা বলছেন এক বৈষ্ণব। ভেলো চুপি চুপি তার থলে থেকে জপের মালাটি চিবিয়ে খাচ্ছিল। বৈষ্ণব গেলেন রেগে! শরৎচন্দ্র ততোধিক রেগে গেলেন বৈষ্ণবের উপরে। আপনি না বৈষ্ণব! ক্ষমাই যদি না করতে পারেন, তবে কিসের বৈষ্ণব আপনি!
লেখক শৈলেশ বিশী দেখা করতে গিয়েছেন কথাশিল্পীর সঙ্গে। ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে এলো ভেলো। না, রাগ দেখানো যাবে না ভেলোর উপর। সে লেখকের ‘সন্তান’। শৈলেশবাবুকে চা দেওয়া হল। ভেলো গা ঝাড়লে গায়ের লোম পড়ল চায়ের কাপ। কাপ নামিয়ে রাখা যাবে না। লেখকের ছেলে বলে কথা! একবার কামড়ে পাড়া দিয়ে যাওয়া একটি লোকের পায়ের মাংস তুলে নিয়েছিল ভেলো। হাসপাতালে পাঠিয়ে ভেলোর লালা পরীক্ষা করালেন শরৎ। মানুষটির চিকিৎসার খরচও দিলেন।
ঢাকা থেকে ডি লিট নিয়ে ফিরলেন শরৎ। ভেলো ক’দিন লেখককে দেখতে না-পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল। শেষে মারা গেল। হাউ হাউ করে কাঁদলেন শরৎ এবং তাঁর স্ত্রী। নিজের হাতে বাড়ির বাগানে গর্ত করে কবর দিলেন ভেলোর। শ্রাদ্ধ করালেন। মানুষ খাওয়ালেন। ভেলোর স্মৃতিতে সমাধি গড়লেন। তার উপরে তুলসী মঞ্চ। বেশ কিছু দিন কেমন আনমনা হয়ে পড়লেন ভেলোর শোকে। খাওয়াদাওয়া করতে মন চাইত না। একা থাকলেই ভেলোর সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতেন। শূন্য বুকে হাহুতাশ করতেন ভেলোর জন্য।
এই না হলে শরৎচন্দ্র!সারমেয়র প্রতি এমন ভালবাসা যাঁর, তাঁর হাতেই সম্ভব মহেশের মতো গল্প রচনা।
(তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী)।