উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
এক দিন আগে ভর্তি করানো রোগী ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। তাঁর দেহ ভাসতে দেখা গেল হাসপাতালের পাশে একটি পুকুরে। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল হুগলির উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবার। বিজেপির তরফেও বিক্ষোভ শুরু হয় হাসপাতালের সামনে। মঙ্গলবার এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অন্য দিকে, পুরো ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত রোগীর নাম অভয় পাঠক। ৭২ বছরের অভয় হুগলির হিন্দমোটরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদিক পাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। সোমবার সকালে তাঁকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায় পরিবার। বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের পাশে একটি পুকুর থেকে এক প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়েরা জানান, সোমবার বিকেলে এক ব্যক্তিকে ওই পুকুরে নামতে দেখেছিলেন তাঁরা। পরে জানা যায়, ওই মৃত ব্যক্তিই হাসপাতাল থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া অভয়। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। মৃতের ছেলে প্রদীপ পাঠকের কথায়, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এক জন রোগীর দেহ পাশের পুকুরে ভাসতে দেখা গেল। কী ভাবে হাসপাতাল থেকে এক জন রোগী বেরিয়ে গেলেন, কী ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে মৃত্যু হল তাঁর, কিছুই জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!’’
পুলিশ জানিয়েছে, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালস্ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। অন্য দিকে, উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার নবীন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বলেন,‘‘গতকাল (সোমবার) থেকে দু’জন রোগী নিখোঁজ ছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পরেই উত্তরপাড়া থানাকে জানানো হয়। পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ কি না এখনও জানা যায়নি। দেহ শনাক্তকরণের পর জানা যাবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘উত্তরপাড়া হাসপাতাল অনেকটা এলাকা জুড়ে, কিছুটা ছড়ানো বিভিন্ন ওয়ার্ড। তাই নজরদারিতে সমস্যা আছে।’’ পরে দেহ শনাক্তকরণের পর হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। দু’জন নিখোঁজ ছিলেন। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছিল। একটা তদন্ত কমিটি গড়ে ঘটনার তদন্ত হবে। আমি জেলা স্তরের তিন জন অফিসারকে পাঠিয়ে রিপোর্ট নেব। যদি নিরাপত্তার কোনও গাফিলতি থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সিপিএম নেতা শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির ফলে এই ঘটনা। হাসপাতালে ন্যূনতম নজরদারিরও লোক নেই।’’ উত্তরপাড়া হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভরত বিজেপি নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীরা কী করছিল ওখানে?’’ যদিও শাসকদলের দাবি ভিন্ন। উত্তরপাড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উত্তরপাড়া হাসপাতালে পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল। নজরদারিও আছে।’’