Irrigation Dept

গঙ্গাভাঙন শ্রীরামপুরে, পরিদর্শনে সেচ-কর্তারা

সরেজমিনে শ্রীরামপুরের পরিস্থিতি দেখলেন সেচ-কর্তারা। সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে শক্তপোক্ত ভাবে পাড় বাঁধানো হোক। না হলে, পাশের রাস্তাঘাট, নির্মাণ নদীর হানায় ভেঙে পড়তে পারে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৪
Share:

ক্ষতি: এ ভাবেই ভাঙছে পাড়। নিজস্ব চিত্র

বলাগড় ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় গঙ্গার পাড় ভাঙছে। ততটা নির্দয় না হলেও গঙ্গার ভাঙন ভাবাচ্ছে হুগলি জেলার বিভিন্ন শহরকেও। স্নানের ঘাট-সহ পাশের জায়গা তলিয়ে যাচ্ছে। শ্রীরামপুর শহরের বঙ্গলক্ষ্মী থেকে চাতরা পর্যন্ত নানা জায়গায় এই সমস্যা রয়েছে। দিন দশেক আগে এ শহরের রেটের ঘাটের সিঁড়ি ফের ভেঙেছে। পাশের দু’টি ঘাট আগেই ভেঙেছিল।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শ্রীরামপুরের পরিস্থিতি দেখলেন সেচ-কর্তারা। সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে শক্তপোক্ত ভাবে পাড় বাঁধানো হোক। না হলে, পাশের রাস্তাঘাট, নির্মাণ নদীর হানায় ভেঙে পড়তে পারে। পুর-পারিষদ (পূর্ত) সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘এর আগে কেএমডিএ পরিস্থিতি দেখেছিল। সেচ দফতরও দেখল। প্রশাসন নিেশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’

সেচ দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, ক্ষতিগ্রস্ত অংশের সংস্কার দরকার। তবে, শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা নেই।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভাঙন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি দেন শ্রীরামপুর পুর-কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন সেচ দফতরকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দে‌য়। তারপরেই সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর বিভাগের (২) এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গৌতম অধিকারী-সহ দফতরের অন্য আধিকারিকরা ভুটভুটি চেপে গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন প্রশাসনের আধিকারিক এবং পুরসভার জনপ্রতিনিধিরা।

সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, কিছু জায়গায় ঘাট ভেঙেছে। লাইনিং (পাড়ের বোল্ডার বা পাঁচিল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে সমীক্ষা করে সংস্কারের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জেলাশাসকের দফতরে পাঠানো হবে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পাড় পাকাপোক্ত ভাবে বাঁধাতে প্রচুর টাকা প্রয়োজন। জাতীয় নদী হিসেবে সংস্কারের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিলে কাজসহজ হবে।

পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেটের ঘাট এবং পাশের দু’টি ঘাট ভাঙনের কবলে পড়ায় স্নান, পুজোআর্চা, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, ছটপুজো করার উপায় কার্যত নেই। রেটের ঘাট থেকে প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা জায়গায় এই সমস্যা। পাড়ে গাছ হেলে পড়েছে, রাস্তায় চিড়। এখানে গঙ্গায় একটি চর গজিয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, চরে বাধা পেয়ে বান বা জোয়ারের সময় জল পাড়ে জোর ধাক্কা দিচ্ছে। তাতেই পরিস্থিতি বেশি বিগড়ে যাচ্ছে।

পাশে সদ্যনির্মিত ওভারহেড জলাধার দেখিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর অসীম পণ্ডিত বলেন, ‘‘ভাঙন এটার কাছে না আসে! ভাঙ‌ন আটকানোর দাবিতে পুরসভায় গণ-দরখাস্ত জমা পড়েছে। গত বছর মহকুমাশাসক পরিস্থিতি দেখে গিয়েছিলেন। পরে কেএমডিএ-র তরফেও পরিদর্শন হয়। সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলাশাসককে (সাধারণ) পরিস্থিতি জানিয়েছি।’’

এক বছর আগে চাতরায় কালীবাবু শ্মশানঘাট ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়ায়। পাশের স্নানের ঘাটের সিঁড়ির কিছুটা তলিয়ে যায়। বেশ কিছু দিন শ্মশানটি বন্ধ রাখা হয়। ভাঙন আটকাতে অস্থায়ী ব্যবস্থা করে ফের চালু হয়।

সেচ দফতরের খবর, ত্রিবেণী থেকে উত্তরপাড়া পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার অংশে নানা জায়গায় ভাঙনের কিছু সমস্যা রয়েছে। কোথাও পলি জমা‌নোর জন্য ইটভাটার ইচ্ছেমতো কাটা বাঁধের জন্য, কোথাও বেআইনি ভাবে বালি তোলার খেসারত দিতে হয়েছে। আবার, আইনের তোয়াক্কা না করে গঙ্গার কিনারে বাড়ি বা বহুতল গজিয়েছে।

নদী বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কার্যত গঙ্গার উপরে পাঁচিল তুললে, জোয়ার-ভাটায় মাটি আলগা হয়ে তার ক্ষতি হচ্ছে। গঙ্গার নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত নির্মাণে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার স্বচ্ছতা প্রয়োজন। হুড়মুড়িয়ে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও বড় বিপদ এড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্কথাকা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement