—ফাইল চিত্র।
বেআইনি নির্মাণ নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের পাহাড় জমছে হাওড়া পুরসভার ‘চেয়ারপার্সন অন কলে’। অথচ,সমস্যার প্রতিকার করতে না পেরে নাজেহাল হচ্ছেন পুরকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, গত জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫০টি ফোনের অর্ধেকের বেশির ক্ষেত্রে অভিযোগ এসেছে বেআইনি বহুতল তৈরির। বাকি অভিযোগ ছিল জমা জল, ভাঙা রাস্তা এবং কালভার্ট নিয়ে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ‘চেয়ারপার্সন অন কল’ কর্মসূচি। হাওড়া শহরে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও অভিযোগ নিয়ে বাসিন্দারা সরাসরি ফোন করতে পারেন পুরসভার চেয়ারপার্সনকে। সেখানেই তাঁরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ তুলেছেন শহরে গজিয়ে ওঠা বেআইনি ভবন নিয়ে। পুরসভার দাবি, প্রতিটি অভিযোগই খাতায় নথিভুক্ত করা হয়ে থাকে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে, বেআইনি নির্মাণের সমাধানে আইনগত জটিলতা থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এখন সরাসরি অভিযোগ পাওয়ায় আগের থেকে তৎপরতা বাড়লেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে সমাধানে, দাবি খোদ পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীর।
সুজয়বাবুর কথায়, ‘‘অন্য সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। কিন্তু বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে যে বিল্ডিং রুল মানতে হয়, তা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। ওই সময়ের মধ্যে বাড়ির মালিক বা প্রোমোটার আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নেওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’’
পুরসভার দেওয়া হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরেই শহরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বেআইনি বাড়ি তৈরি হয়েছে। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই গত অগস্টে নড়ে বসে সদ্য গঠিত প্রশাসকমণ্ডলী। সুজয়বাবুর নেতৃত্বে নতুন প্রশাসকমণ্ডলী পুরসভার বিল্ডিং দফতরের দুর্নীতি রুখতে ঢালাও বদলির নির্দেশ দেয়। তা নিয়ে পুরসভা ও প্রোমোটার মহলে তোলপাড় শুরু হয়। যদিও বেআইনি নির্মাণ তখনকার মতো থমকে গেলেও গত কয়েক মাস ধরে ফের তাতে গতি এসেছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের থেকে পাওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যাপক হারে তিনতলার অনুমতি নিয়ে পাঁচ-ছ’তলা পর্যন্ত তোলা হচ্ছে।
পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, বেআইনি বাড়ি নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরে ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রথমে নোটিস দিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেন। পরে ‘সেল্ফ ডেমোলিশন’ অর্থাৎ, নির্মাতাদেরই সেই নির্মাণ ভাঙতে বলেন তাঁরা। এর জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা এই সময়ের ফাঁকেই। অভিযোগ, ওই সময়ের মধ্যে নির্মাতারা আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে নেওয়ায় পুরসভা আর দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
সূত্রের খবর, বেআইনি নির্মাণ রুখতে না পারায় নাজেহাল পুর প্রশাসন এ বার নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা করছে। ঠিক হয়েছে, পুর এলাকার মধ্যে থাকা বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। সেখানে তাঁদের মতামত নেওয়া হবে। সেখান থেকে যদি কোনও উপায় বার করা যায়, সেই পথেই পুর কর্তৃপক্ষ হাঁটবেন। সুজয়বাবুর আশ্বাস, ‘‘আগে বেআইনি বাড়ি ভাঙার জন্য পুরসভার ডেমোলিশন স্কোয়াড ছিল একটিই। নতুন প্রশাসকমণ্ডলী এসে ৪টি স্কোয়াড করেছে। খুব শীঘ্রই ৭টি বরোয় ৭টি স্কোয়াড তৈরি করা হবে। এতে কাজের গতি বাড়বে।’’