—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি জমি দখল থেকে অবৈধ বহুতল নির্মাণ, জলাজমি ভরাট, অবৈধ পার্কিং থেকে
জমির চরিত্র বদল— হাওড়ায় সব কিছুই হয়ে যায় কোনও অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায়। যে হাতের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা প্রশাসন ও পুলিশ এত দিন করেনি। কারণ, ওই অদৃশ্য হাতের পিছনে সব ক্ষেত্রেই রয়েছেন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা। সোমবার নবান্নের সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুরপ্রধানদের বৈঠকের পরে এ বার সেই অদৃশ্য হাতগুলির নাগাল পেতে কি প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে? রাজনৈতিক মহলের একাংশ তেমনটাই মনে করছে। আগামী কাল, বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপ রায়, হাওড়ার নগরপাল, জেলাশাসক ও প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে হাওড়া পুরসভায় বৈঠক ডেকেছেন পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। সেখানে হাওড়া শহরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে বলে খবর।
কেমন করে কাজ করে এই অদৃশ্য হাতগুলি? কত দিন ধরেই বা চলছে এই খেলা?
শালিমারে গঙ্গার ধারে পড়ে ছিল ২৫ বিঘা সরকারি জমি। ২০১৭ সালে হাওড়ার তৎকালীন মেয়র (পরে যিনি বিজেপিতে যোগ দেন) রথীন চক্রবর্তী ওই জমিতে স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা করেন। তিনি সেই প্রকল্পের উদ্বোধন করাতে চেয়েছিলেন রাজ্যের
পুরমন্ত্রীকে দিয়ে। কিন্তু পুরমন্ত্রী উদ্বোধনে আসেননি। পরে দেখা যায়, বহু কোটি টাকার সেই জমি কলকাতার একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থাকে লিজ়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি পঁচিশতলা আবাসন ভবন তৈরির জন্য। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জমি লিজ়ে দেওয়া থেকে আবাসনের দখলদারি অথবা শালিমার স্টেশনের বাইরের পার্কিং লটে সিন্ডিকেট নিয়ে গোলমাল— সব কিছুর পিছনেই আছে ক্ষমতাশালীদের হাত।
তাঁদের হাতে পড়েই ৯০ লক্ষের ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে হয়ে যাচ্ছে ১ কোটি ২০ লক্ষ!
শুধু শালিমার নয়, হাওড়া শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই
শাসকদলের ক্ষমতাবানদের ছায়া। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, ‘‘দলের লোকেরা যে এ সব কাজে সরাসরি যুক্ত, তা কি বর্ষীয়ান নেতা অরূপ রায় জানেন না?’’ হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে তৃণমূল পুর বোর্ড গড়ার পরে পুরসভার অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত বেআইনি তল গড়তে ২০০ টাকা প্রতি বর্গফুটে নেওয়ার চল শুরু করেন এই নেতারাই। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভাও আলাদা ভাবে মোটা অঙ্কের জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে বৈধতা দিতে শুরু করে। এতে পুরসভার
কোষাগারের পাশাপাশি এক শ্রেণির নেতাদেরও পকেট ভর্তির ব্যবস্থা হয়।
পরবর্তী কালে, ২০১৮ সালের পরে পুরসভায় নির্বাচন না হওয়ায় জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে বৈধতা দেওয়ার সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুরসভার দেওয়া হিসাবই বলছে, বর্তমানে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজারের উপরে। গত তিন বছরে ভাঙা হয়েছে মাত্র ১৩০টি বাড়ি। গত কয়েক দিনের মধ্যেই বাঁকড়ার মণ্ডলপাড়া, লিলুয়ার মিরপাড়ার জলার মাঠে সরকারি জমি বুজিয়ে বিক্রির চেষ্টা হয়েছে। গত চার বছরে বোজানো হয়েছে ৪৬টি পুকুরও।
হাওড়া শহর জুড়ে চলা দলীয় নেতাদের এই বেআইনি কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষোভ ব্যক্ত করলেও জেলার প্রবীণ মন্ত্রী তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি অরূপ রায় কি কিছুই জানতেন না? অরূপ বলেন, ‘‘সবই জানতাম। আমি দিনের পর দিন জেলাশাসক, নগরপাল, পুর চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। দলের রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমি সব সময়েই পুকুর ভরাট, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে।’’