হাওড়া মহাত্মা গান্ধী রোডের দুই পাশে শ্রী মার্কেটের অস্থায়ী দোকান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
লোকসভা ভোটের আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন হলেও গঙ্গার নীচ দিয়ে এখনই যে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে না, তা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু ওই শাখার প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দানে ট্রেন চলাচলের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রোর কাজের জন্য উচ্ছেদ হওয়া শ্রী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পুরনো জায়গায় পুর্নবাসন। বিভিন্ন জটিলতায় এখনও থমকে আছে সেই প্রক্রিয়া। ফলে, ঠিক কবে হাওড়া ময়দান থেকে যাত্রী পরিষেবা শুরু হবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর বিরুদ্ধে শ্রী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের করা মামলা নিয়ে যে জটিলতা চলছে, তার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত হাওড়ায় ময়দানের উপরের অংশে পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে এগোনোই যাবে না। ফলে, গোটা প্রক্রিয়াই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, হাওড়া ময়দানের উত্তর দিকে শ্রী মার্কেটের ১২৯টি স্টল উচ্ছেদ করে তার নীচে মেট্রোর কাজ হয়েছিল। চুক্তি ছিল, তিন বছরের মধ্যে শ্রী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আগের জায়গা ফিরিয়ে দেবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০১০ সালে হওয়া সেই চুক্তির পরে ১৩ বছর কেটে গেলেও এখনও ১২৯টি স্থায়ী স্টল তৈরি হয়নি। কাজ শুরুর সময়ে মহাত্মা গান্ধী রোডের দু’পাশের ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী স্টল তৈরি করে দিয়েছিল কেএমআরসিএল। এখনও পর্যন্ত সেখানেই ব্যবসা চালাচ্ছেন তাঁরা।
আজ, বুধবার হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত মেট্রোপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগের দিন, মঙ্গলবার হাওড়া ময়দানে গিয়ে দেখা গেল, মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যখন ফুলের সাজ এবং ভূগর্ভে ব্যস্ততা তুঙ্গে, তখনও উপরের রাস্তার চিত্রটা এতটুকু বদলায়নি। গোটা ময়দান চত্বর জুড়ে মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীদের ভিড়। ফুটপাত উপচে রাস্তা পর্যন্ত নেমে এসেছেন হকারেরা। বঙ্গবাসী চত্বর জুড়ে বেআইনি ট্যাক্সি ও টোটোস্ট্যান্ড। প্রতি ১০-১৫ মিনিট অন্তর হাজার হাজার যাত্রী কোন পথ দিয়ে আসবেন, কী ভাবে বেরোবেন— তার রূপরেখা তৈরি হলেও কাজ এগোয়নি এক চুলও।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছিল, মেট্রোর উদ্বোধনের আগে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে। আগে যেখানে শ্রী মার্কেট ছিল, সেখানে বাড়ি করে দেবে কেএমআরসিএল। সেখানে তৈরি হবে পার্কিং লট এবং হাঁটার রাস্তা। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি।’’
হাওড়া জেলা প্রশাসনের অভিযোগ, পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেএমআরসিএল। ওই সংস্থাকে সমস্ত কাগজপত্র অনেক দিন আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রী মার্কেটের ১২৯টি স্টলের নকশা করে কেএমআরসিএল পাঠিয়েছিল প্রশাসন, পুরসভা, পূর্ত দফতর ও ব্যবসায়ীদের কাছে। সব পক্ষই সেই নকশা অনুমোদন করেছে।
হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) জিতিন যাদব বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেএমআরসিএলের কাছে সমস্ত কাগজপত্র পৌঁছে গিয়েছে। এখন পুরো ব্যাপারটাই ওদের দায়িত্ব।’’ কিন্তু কেএমআরসিএল কেন উদ্যোগী হচ্ছে না? সংস্থার বক্তব্য, গত পুজোর আগে বাকি সব সমস্যা মিটে গেলেও শ্রী মার্কেটের স্টলমালিকেরা ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধি, পার্কিং-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দাবি করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলা এখনও চলছে। তার মীমাংসা হওয়া পর্যন্ত কিছু করা সম্ভব নয়।
কেএমআরসিএল-এর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘শ্রী মার্কেট হকার্স কর্নার ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্টল ভাঙার তিন বছরের মধ্যে স্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়ার কথা ছিল ব্যবসায়ীদের। ১৩ বছরেও তা হয়নি। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য মামলা করতেই পারি। কিন্তু তার জন্য বাড়ি করে না দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত?’’