টাউন স্কোয়্যার এখন যেমন। ছবি: প্রকাশ পাল।
পুরনো সৌন্দর্য ফেরাতে গত কয়েক বছরে ‘পুনরুদ্ধার’ করা হয়েছে শ্রীরামপুরের বিভিন্ন স্থাপত্য। কিন্তু প্রস্তাবিত টাউন স্কোয়ারের কাজ শুরু হয়েও থমকে গিয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শ্রীরামপুরের পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘তহবিল না আসায়, আপাতত কাজ বন্ধ। আমরা রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েছি, যোগাযোগ রাখছি। টাকা এলেই কাজ চালু হবে।’’
ব্লক কার্যালয়ের পাশে আদালতের সীমানা-প্রাচীরের সামনে থেকে সেন্ট ওলাভ গির্জা এবং তার মাঝামাঝি অংশে থাকা নর্থ গেট থেকে গঙ্গার নিশান ঘাট পর্যন্ত জায়গার সৌন্দর্যায়ন করে ‘টাউন স্কোয়ার’ তৈরির কথা।
শ্রীরামপুর হেরিটেজ রেস্টোরেশন ইনিশিয়েটিভের (শ্রী) সম্পাদক দেবাশিস মল্লিক বলেন, ‘‘টাউন স্কোয়ার এবং তার সঙ্গে গঙ্গার পাড় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সংস্কার হলে শহরের রূপ বদলে যাবে। টাউন স্কোয়ারের কাজ কেন থমকে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’’
মাস খানেক আগে ‘শ্রী’-র তরফে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া চিঠিতে ওই কাজ দ্রুত শুরু করার আর্জি জানানো হয়। প্রাচীন ভবন সংস্কারে দক্ষ এ রাজ্যের নামী স্থপতিরা ওই চিঠিতে সই করেন। ‘শ্রী’-র সদস্য মোহিত রণদীপের কথায়, ‘‘টাউন স্কোয়ার তৈরি হলে শ্রীরামপুরের মানচিত্রে সুন্দর এক ঠিকানা যোগ হবে, যা গোটা বাংলাকে আকর্ষিত করবে।’’ তাঁরা চান, চন্দননগরের স্ট্র্যান্ডের আদলে এই শহরেও গঙ্গার পাড় সাজানো হোক। গঙ্গাপাড়ে বেআইনি নির্মাণ থাকলে সরিয়ে ফেলা হোক।
প্রস্তাবিত টাউন স্কোয়ারের নকশা করেছেন স্থপতি আশিস আচার্য। স্থপতিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাঁর তৈরি নক্শা বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা রয়েছে, ওই জায়গা সুন্দর ভাবে সাজানো হবে। আলোকিত করা হবে। বসার জায়গা থাকবে। ঘোরাফেরার মুক্ত জায়গা হবে ওই চৌহদ্দি। বিকেলের পরে মানুষজন সময় কাটাতে পারবেন। আশিসের কথায়, ‘‘ওই অংশ, আদালত ও প্রশাসনিক ভবনের সামনের মাঠ, জলাশয়— সব মিলিয়ে ওই চৌহদ্দি শ্রীরামপুরের ফুসফুসের মতো। আগে জনবসতি কম ছিল। খোলামেলা জায়গায়
মানুষ শ্বাস নিতে পারতেন। টাউন স্কোয়ার হলে পুরনো সেই সময় ফিরে আসতে পারে।’’
প্রস্তাবিত টাউন স্কোয়ারের জায়গায় আগে অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ড ছিল। এখন শহরের অন্যত্র বাস টার্মিনাস হয়েছে। তবে, টোটো ও বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ব্লক অফিসের পাশেই প্রস্তাবিত টাউন স্কোয়ার শুরু হওয়ার মুখে রয়েছে পুরসভার বিশাল ভ্যাট।
পুরসভার তরফে এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকার দেবাশিস ঘোষ জানান, টাউন স্কোয়ারের এলাকা দু’হাজার বর্গমিটারের বেশি। ওই অংশের বিদ্যুতের ওভারহেড তার মাটির নীচে বসানো হয়েছে। ৩৫ লক্ষ টাকায় সিইএসসি এই কাজ করেছে। নিকাশির কাজও অনেকটা হয়েছে। নির্মাণ সংক্রান্ত প্রায় ৩ কোটি টাকার কাজই বাকি। দরপত্র করে কাজ চালু হলেও টাকার অভাবে থমকে যায়। টাকা এলেই কাজ শুরু হবে। ভ্যাট
উঠে যাবে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য সব কাজই হবে।
টাউন স্কোয়ারে রূপসী শ্রীরামপুরকে দেখার অপেক্ষায় শহরবাসী।