রাত পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: তাপস ঘোষ।
হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। কিন্তু কোথায় তারা?
পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন, শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ নিয়ে বিভ্রান্তি কাটল না দুই জেলায় (হাওড়া ও হুগলি)। কারণ, আগে দুই জেলার বেশ কয়েক জায়গায় তাদের রুট মার্চ করতে দেখা গেলেও এ দিন রাত পর্যন্ত বহু জায়গাতেই তাদের মোতায়েন করতে দেখা যায়নি। ফলে, বিরোধীরা তো বটেই, ভোটকর্মীদেরও একটি বড় অংশ চিন্তিত ভোটে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে। দুই জেলা প্রশাসনই অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাস দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশ বলছে, প্রতি বুথে যতজন পুলিশকর্মী থাকবেন, ততজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে মোতায়েন করতে হবে। আজ, শনিবার সকাল সাতটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু। অথচ, তার আগের দিন রাত আটটা পর্যন্ত হাওড়া জেলায় সিংহভাগ বুথে ভোটকর্মীদের সঙ্গে দু’তিন জন পুলিশকর্মী থাকলেও দেখা গেল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর একজন জওয়ানকেও।
এ নিয়ে প্রশ্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা এড়িয়ে গিয়েছেন। গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা ফোন ধরেননি। এমনকি, জেলার একাধিক বিডিও এবং থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের কথাতেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এক বিডিও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী স্ট্রং রুমের পাহারায় আছে। বুথে কখন যাবে, সে বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই।’’ আর এক বিডিও-র কথায়, ‘‘কোন কোন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তার তালিকা পুলিশের কাছে আছে।’’ সেই ব্লক অফিস যে থানার অধীনে, সেই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা বলতে পারব না। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তাদেরই অফিসার বহাল করছেন। সেই তালিকা তাদের কাছেই আছে।’’ অন্য একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘এইমাত্র বিভিন্ন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এলাম।’’ কত বুথে? এই প্রশ্নে ওই পুলিশ আধিকারিক ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এই ‘অব্যবস্থা’য় ক্ষুব্ধ ভোটকর্মীদের একাংশও। রাজাপুর থানা এলাকার একটি বুথে ভোটকর্মীদের সঙ্গে এ দিন দেখা গেল তিন পুলিশকর্মীকে। আদালতের নির্দেশ মানলে এখানে তিন জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানও বহাল হওয়ার কথা। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একজনও জওয়ানকে দেখা যায়নি। অথচ, এই এলাকায় কয়েকদিন আগেই বোমাবাজি হয়। এক ভোটকর্মী বলেন, "কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী? ভোটের দিনে কি হবে বুঝতে পারছি না। আতঙ্কে আছি।’’
সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, "অনেকবার চেষ্টা করেও আমরা জানতে পারিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কী হল? আমাদের আশঙ্কা, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চক্রান্ত হচ্ছে।’’
পাঁচলার ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, "কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চ করেছে। কিন্তু বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে আদালতের নির্দেশ মানা হবে কি না, সে বিষয়ে আমরা অন্ধকারে আছি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাঁচলার কোনও বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি।’’
বাহিনী নিয়ে হুগলিতেও বিভ্রান্তি একই রকম। চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের বিদ্যামন্দির স্কুল, কোদালিয়া ২ পঞ্চায়েত দফতর, কানাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের বিদ্যাভবন— কোথাও রাত পর্যন্ত বাহিনী দেখা যায়নি। একই ছবি পান্ডুয়া, বলাগড়ের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও। তবে কোথাও কোথাও দু’এক জন পুলিশের দেখা মিলেছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দিনও কেন্দ্রীয় বাহিনী জেলায় আসছে। তাই প্রতি বুথে বাহিনীর হার এই মুহূর্তে জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আদালতের নির্দেশ মেনেই বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’’
মনোনয়ন এবং প্রচার পর্বে জেলায় সবচেয়ে বেশি অশান্তি হয়েছে আরামবাগে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডলের দাবি, ‘‘প্রতি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা থাকছে। তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এই মহকুমায় আছে। আরও ১০ কোম্পানি শীঘ্রই পৌঁছবে। স্পর্শকাতর বুথ ছাড়াও অনেক জায়গায় বাহিনী দেওয়া যাবে।’’
তবে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে। বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। জাঙ্গিপাড়ার একটি স্কুলে দু’কোম্পানি আধাসেনাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) হুগলির কোথাও বাহিনীকে দেখা যায়নি।’’ গোঘাটের একটি বুথের দায়িত্ব পাওয়া এক ভোটকর্মীর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। আমাদের সঙ্গে একজন বন্দুকধারী পুলিশ দেওয়া হয়েছে। জানি না কী হবে!’’
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বাহিনী নিয়ে দলগত ভাবে আমাদের মাথাব্যথা নেই। বাহিনীর কাজ কী হবে, আদালতের নির্দেশে অনেকটা ঠিক হয়েছে। বিরোধীরা বরং বাহিনী না খুঁজে, মানুষ খুঁজুন, কারা তাদের ভোট দেবেন! বাহিনী তো আর ভোট দেবে না!’’