ছবি প্রতীকী
বন্ধ ঘর থেকে মিলল এক প্রৌঢ়ার রক্তাক্ত দেহ। সেখান থেকেই অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হল তাঁর বছর আটত্রিশের ছেলেকে। মায়ের দেহ ছিল মেঝেয়, আর বাঁ হাতের শিরা কাটা অবস্থায় ছেলেকে উদ্ধার করা হয় বিছানা থেকে। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় ছেলেরও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন ভৈরব বর লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রৌঢ়ার নাম কৃষ্ণা হাইত (৬০)। তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও ছেলে অভিষেককে সঙ্কটজনক অবস্থা হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ক্ষণ পরে চিকিৎসকেরা অভিষেককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, অর্থাভাব ও পারিবারিক অশান্তির জেরে মাকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় সম্পন্ন পরিবার বলেই পরিচিত ছিলেন অভিষেকরা। তাঁর নিজের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসা রয়েছে। বছর দেড়েক আগে তাঁর সঙ্গে সলপের বাসিন্দা এক তরুণীর বিয়ে হয়। পুলিশ জানায়, ব্যবসায় মন্দা চলায় তাঁর বাজারে কিছু ধারদেনা হয়ে যায়। বিয়ের পরে তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে নগদ টাকা নেন। স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখেও টাকা জোগাড় করেন। যুবকের পরিবারের দাবি, কয়েক মাস ধরে টাকা ও বন্ধক দেওয়া গয়না ফেরত দেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ আসছিল। এই নিয়ে অশান্তি চরমে উঠলে অভিষেকের স্ত্রী বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান।
অভিষেকের বৌদি সোমা হাইত বলেন, ‘‘ধার করা টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ আসছিল। অভিষেককে নানা রকম হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।’’
যদিও এ দিন অভিষেকের বাড়িতে এসেছিলেন তাঁর মামাশ্বশুর দেবাশিস মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘টাকা ও গয়না ফেরত দেওয়ার জন্য অভিষেককে চাপ দেওয়া হয়েছে, এ কথা ঠিক নয়। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওকে সব সময়েই টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। আমরা কোনও হুমকিও দিইনি।’’
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে ওই পরিবার থেকে ফোন করে জানানো হয়, ঘরের দরজা সকাল থেকে খোলেননি মা-ছেলে। তাঁদের সাড়া মিলছে না। এর পরেই পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ফেলে। দেখা যায়, রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে। মেঝেয় একটি রক্ত মাখা ব্লেড ও ফিনাইলের বোতল পড়ে আছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মায়ের কব্জির শিরা কেটে খুন করে ছেলেও একই পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও বিস্তারিত তদন্তের পরে ঘটনাটি স্পষ্ট বোঝা যাবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঋণ মেটাতে না পেরে পারিবারিক অশান্তির জেরে এই ঘটনা কি না, তা জানতে অভিষেকের স্ত্রী-সহ পরিবারের সকলকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।