—প্রতীকী ছবি।
‘রোগটা’ এখনও যায়নি!
কমেনি করোনাভাইরাসের দাপট। আর সেই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও তাঁর পরিজনকে ‘হেনস্থা’ করার মানসিকতাও দূর হয়নি একাংশের মধ্যে থেকে। আর তাই হাওড়ার করোনা আক্রান্ত এক পরিবারকে প্রথমে জানলা বন্ধ না রাখলে ইট ছোড়ার হুমকি, পরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশীদের একাংশের বিরুদ্ধে।
হাওড়ার দানেশ শেখ লেনে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন বিদিশা বসু। তিনি জানান, তাঁর ভগিনীপতির গত ৩১ মার্চ কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। পরের দিন পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে বোনেরও। এর পরেই ওই দম্পতি তাঁদের আন্দুল রোডের ফ্ল্যাটে চলে যান। গত ৪ মার্চ বিদিশার বাবারও করোনা ধরা পড়ে। ৫ মার্চ ভোরে তিনি ছোট মেয়ে ও জামাইয়ের ফ্ল্যাটে চলে যান। বিদিশা বলেন, ‘‘গত ৭ এপ্রিল আমি খাবার দিতে যাওয়ার সময়ে বেশ কয়েক জন বাসিন্দা ঘিরে ধরেন। কেন ওঁদের না জানিয়ে কোভিড রোগীদের ফ্ল্যাটে আনা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।’’ পাশাপাশি, জানলা বন্ধ রাখার জন্য এবং সিঁড়ি স্যানিটাইজ় করার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পরে স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানালে তিনি পুরসভার গাড়ি পাঠিয়ে সিঁড়ি স্যানিটাইজ় করার ব্যবস্থা করে দেন।
৮ এপ্রিল বিদিশাকে ফোন করে জানলার কাচ ভাঙারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই তরুণী জানান, খবর পেয়ে এ জে সি বসু বটানিক গার্ডেন পুলিশ স্টেশন থেকে এক জন অফিসার আসেন। বিদিশা বলেন, ‘‘ওই অফিসার বলেছিলেন, আর অসুবিধা হবে না।’’ কিন্তু তার পরেও সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ বিদিশার। ১০ এপ্রিল পিপিই পরে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন বিদিশার বোন ও তাঁর স্বামী। তাঁদের সন্ধ্যা ৬টার পরে আসতে বলা হয়। ওই দম্পতি বাড়ি ফিরে দেখেন, ফ্ল্যাটের নীচের দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা চন্দন কুণ্ডু-সহ অন্যান্য প্রতিবেশীরা তাঁদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন। জানলা খোলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
বিদিশা বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পরিচিতদের জানাই। তাঁরা বেশ কয়েক বার ফোন করার পরে তালা খুলে দেওয়া হয়।’’ ওই তরুণীর বোন বলেন, ‘‘চন্দনবাবু-সহ অন্যেরা বলেন, যেন আমরা ঘর থেকে না বেরোই। আর ভোট দিতে যেতে পারিনি।’’ বিদিশার অভিযোগ, থানায় গিয়ে বিষয়টি জানালেও পুলিশ তাতে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কর্তব্যরত অফিসার জানিয়ে দেন, অভিযোগপত্রটি তখনই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। রেখে যেতে হবে।’’ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে তিনি ফিরে আসেন।
যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওঁদের যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখতে আগেই পুলিশ গিয়েছিল। শনিবার ভোট শেষ হওয়ার সময়ে উনি আসেন। তাই অভিযোগপত্রটি জমা রেখে যেতে বলা হয়েছিল। তবে অভিযোগ শুনে টহলদারি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল।’’
প্রতিবেশী চন্দন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ওঁরা থাকছেন তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু নিজে থেকে কাউকে জানাননি। আগে জানলে সতর্কতা নেওয়া যেত। তবে ফ্ল্যাটে ঢুকে খাবার দিতে বারণ করেছিলাম। জানলা বন্ধের বিষয়ে অন্য এক জন আপত্তি করেন।’’
তবে করোনাভাইরাস কারও বাড়ির জানলা দিয়ে বেরিয়ে অন্য বাড়িতে ঢুকে কাউকে সংক্রমিত করেছে, এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড আক্রান্ত রোগী নিজেকে ঘরে আইসোলেটেড করে রাখলেও জানলা-দরজা খোলা রাখতে হবে। যাতে স্বাভাবিক ভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। এই নিয়ে বার বার বিতর্ক হলেও এ ভাবে সংক্রমিত হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। বরং আমাদের মানবিক ও সহানুভূতিশীল হতে হবে।’’