Howrah

নিরাপত্তায় হাওড়া স্টেশনে আরও সিসি ক্যামেরা, নজরদার দলও

এখন থেকে সাদা পোশাকে আরপিএফের নজরদার দল থাকবে স্টেশন চত্বরে। তাদের কাজ হবে, স্টেশন চত্বরে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করা সন্দেহজনক লোকজনকে চিহ্নিত করা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫৪
Share:
উদ্যোগ: এক শিশুকন্যাকে অপহরণের ঘটনার পরে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই হাওড়া স্টেশন চত্বরে বসানো হবে এমনই আরও কয়েকশো সিসি ক্যামেরা।

উদ্যোগ: এক শিশুকন্যাকে অপহরণের ঘটনার পরে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই হাওড়া স্টেশন চত্বরে বসানো হবে এমনই আরও কয়েকশো সিসি ক্যামেরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেশের অন্যতম বড় রেল স্টেশন হাওড়া। অথচ, সেখানকার সিংহভাগ অংশেই এত দিন ছিল না কোনও সিসি ক্যামেরার নজরদারি! সম্প্রতি ওই স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে এক মহিলা যাত্রীর তিন বছরের মেয়ে চুরি যাওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়। এর পরেই আরপিএফ ও রেল পুলিশের মধ্যে স্টেশনের যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক হয় এবং সেখানেই এই তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, স্টেশনের ভিতরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় না থাকা ‘গ্রে এরিয়া’ বা ধূসর স্থান রয়েছে ৫৫০টি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই জায়গাগুলিতে মোট ৫৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্যামেরাতেই থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ‘ফেস ভেরিফাইং সিস্টেম’ বা এফআরএস। রেল পুলিশের বক্তব্য, এত দিন এই ‘গ্রে এরিয়া’ই অপরাধীরা ব্যবহার করত, যা শিশু পাচারের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো হয়েছিল। তাই ঠিক হয়েছে, এখন থেকে সাদা পোশাকে আরপিএফের নজরদার দল থাকবে স্টেশন চত্বরে। তাদের কাজ হবে, স্টেশন চত্বরে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করা সন্দেহজনক লোকজনকে চিহ্নিত করা।

Advertisement

গত ৫ মার্চ ভোরে হাওড়া স্টেশনের পুরনো কমপ্লেক্সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে থাকা তিন বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। ওই মহিলার সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তাঁর শিশুটিকে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল পাচার-চক্রের সঙ্গে জড়িত উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা শাহনারা বেগম। ঘটনার পরে অভিযুক্তের আবছা বর্ণনা ছাড়া পুলিশকে আর কিছুই জানাতে পারেননি অসহায় মা। ফলে, শুধুমাত্র সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তের জাল বিস্তার করতে শুরু করে রেল পুলিশ। কিন্তু হাওড়া স্টেশনের বিস্তৃত এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় না থাকায় এবং স্টেশন চত্বরের অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা খারাপ থাকায় ওই পাচারকারীকে চিহ্নিত করতে প্রথমে ব্যর্থ হয় রেল পুলিশ।

দীর্ঘ চেষ্টার পরে হাওড়া স্টেশনের বাইরে বিচালি ঘাট, সাঁকরাইল স্টেশন, হুগলির ফুলেশ্বর স্টেশন, উলুবেড়িয়া-সহ বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে মূল অপহরণকারীর হদিস মেলে। গত ১১ মার্চ রাতে উলুবেড়িয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহনারাকে। তাকে জেরা করে পরদিন বাউরিয়া থানা এলাকা থেকে মাহফুজা বিবি নামে আর এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা জানায়, শিশুটিকে রাজস্থানে পাচার করা হয়েছে। এর পরে হাওড়া রেল পুলিশের
একটি বিশেষ তদন্তকারী দল রাজস্থান পুলিশের সাহায্যে গত ১৪ তারিখ জয়পুরে সোরাজ কানজার নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

Advertisement

রেল পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘হাওড়া স্টেশনে ৫৫০টি ‘গ্রে এরিয়া’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ঠিক হয়েছে, স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে আরও ৫৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। একটি সাদা পোশাকের বিশেষ মহিলা আরপিএফ বাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছে, যাঁদের হাতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া থাকবে।’’ তিনি আরও জানান, অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের পিছনে সিসি ক্যামেরার ভূমিকা ছিল সব থেকে বেশি। আগামীতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আরপিএফ ও রেল পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। এই ঘটনার পিছনে যে অপহরণ-চক্র আছে, তার খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement