রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ ক্লাবকর্তাদের
Howrah

ক্লাবকে দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ফেরানোর নির্দেশ বিধায়কের

বিধায়কের অভিযোগ মানতে চাননি ক্লাবকর্তারা। স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের আবার অভিযোগ, বিধায়কের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে রাজনীতি।

Advertisement

নুরুল আবসার

পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৮:২২
Share:

—প্রতীকী ছবি

বিধায়ক কোটায় বছর ছ’য়েক আগে পাঁচলার গঙ্গাধরপুরের জালালসি গ্রামের একটি ক্লাবকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছিল। সেটি সম্প্রতি ওই ক্লাবের থেকে নিয়ে অন্য একটিক্লাবকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পাঁচলার বিডিও এষা ঘোষ। তাঁর দাবি, বিধায়ক গুলশন মল্লিকের নির্দেশে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিধায়কের দাবি, ‘ক্লাবটি ঠিক ভাবে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করছিল না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

Advertisement

তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বেধেছে এলাকায়। বিধায়কের অভিযোগ মানতে চাননি ক্লাবকর্তারা। স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের আবার অভিযোগ, বিধায়কের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে রাজনীতি। এ দিকে, বিডিও নির্দেশিকা পাঠানোর পরেও ক্লাব সদস্যেরা অ্যাম্বুল্যান্সটি ফেরাননি। এই ডামাডোলের মাঝে পড়ে পথে নামছে না অ্যাম্বুল্যান্স।

নিউ আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবকে অ্যাম্বুল্যান্সটি দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। প্রত্যন্ত এই এলাকায় রোগী এবং প্রসূতিদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সটি উপযোগী বলে গ্রামবাসী এবং ক্লাব সদস্যদের দাবি। বিশেষ করে করোনার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি যথেষ্ট কাজে দিয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। ক্লাব সূত্রের খবর, ৩ জুলাই বিডিওর লেখা নির্দেশিকা নিয়ে পাঁচলা থানার পুলিশ গ্রামে হাজির হয়। ক্লাবের সদস্যদের পুলিশ নির্দেশিকা দেখিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। রাজি হননি এলাকার বাসিন্দারা। এরপরেই গ্রামবাসীরা বিডিওরকাছে জানতে চান, অ্যাম্বুল্যান্সটিতুলে নেওয়ার কারণ কী। ক্লাব সদস্যদের দাবি, বিডিও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

Advertisement

বিডিও বলেন, ‘‘বিধায়ক তাঁর বরাদ্দের জিনিস কাউকে দিয়েছেন। এ বার তিনি সেটা ফিরিয়ে নিতে চান। আমি সেটুকুই জানিয়েছি গ্রামবাসীকে। কিন্তু তার কারণ বিধায়কই বলতে পারবেন।’’

কী কারণে এই সিদ্ধান্ত? গুলশনে অভিযোগ, ‘‘ক্লাবটি অ্যাম্বুল্যান্সটি অপব্যবহার করছিল। রোগীদের পরিবারের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল। অভিযোগ পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি তুলে নেওয়ার জন্য বিডিওকে বলি।’’

গ্রামবাসী ও ক্লাবের সদস্যেরা অভিযোগ মানতে নারাজ। ক্লাবের সদস্য তথা ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক শেখ হাবিব বলেন, ‘‘প্রায় ছ’বছর ধরে অ্যাম্বুল্যান্সটি চলছে। হঠাৎ পঞ্চায়েত নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিধায়কের মনে হল, এটি বেশি টাকায় ভাড়া খাটানো হচ্ছে! আগে তো উনি এই অভিযোগ তোলেননি।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘আসলে আমরাকয়েক জন তৃণমূল ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দিয়েছি। তাতেইবিধায়কের রাগ।’’

ক্লাবের অন্য সদস্যদের আরও অভিযোগ, শুধু বিডিওকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েই বিধায়ক ক্ষান্ত হননি। রোজ গ্রামে পুলিশ পাঠিয়ে উনি অ্যাম্বুল্যান্স ফেরতের জন্য তদবির করছেন। পুলিশের ভয়ে এলাকার অনেকে গ্রামছাড়া। তাই অ্যাম্বুল্যান্স চালানো যাচ্ছে না। রোগীদের বেশি ভাড়া দিয়ে অন্য গাড়িতে চেপে হাসপাতালেযেতে হচ্ছে।

স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘জালালসি গ্রামের অনেকে, বিশেষ করে ক্লাবটির একাধিক সদস্য তৃণমূল ছেড়ে আমাদের দলে এসেছিলেন। একেবারেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জেরে তৃণমূল বিধায়ক এই কাণ্ড করেছেন। গ্রামবাসীরা ওই অ্যাম্বুল্যান্স ফেরাবেন না।’’

গুলশন বলেন, ‘‘আমি অ্যাম্বুল্যান্সটি মানুষের পরিষেবা দেওয়ার জন্য দিয়েছিলাম। ভাড়া খাটানোর জন্য নয়। অ্যাম্বুল্যান্স ফেরত দিতে ওঁরা বাধ্য। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এই প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। দ্রুত সেই কাজ সারা হবে।’’ এর সঙ্গে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ কোনও যোগ নেই বলে তাঁর দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement