damaged roads

Damaged roads: সংস্কারের অভাবে বেআব্রু হাওড়ার পথের কঙ্কাল

রাস্তা মেরামতির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারেরা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩২
Share:

বেহাল: জমা জল সরতেই ধস নেমেছে রাস্তায়। সোমবার, ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

কোথাও রাস্তায় ধস নেমেছে, কোথাও আবার পিচের আস্তরণ উঠে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টি থামার পরে ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও হাওড়া শহরের বহু এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। আর যেখান থেকে জল সরেছে, সেখানে এ ভাবেই বেআব্রু হয়ে পড়েছে পথের কঙ্কালসার চেহারা।

Advertisement

গত পাঁচ বছর ধরে হাওড়ায় রাস্তা মেরামতির কাজ হয়নি। আর তার আগে রাস্তা মেরামতির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারেরা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই জোড়া-ফলার অভিঘাতেই বর্তমানে হাওড়ার পথঘাটের এমন শোচনীয় অবস্থা। যদিও ঠিকাদারদের দাবি, স্থানীয় নেতা-কাউন্সিলরদের মোটা টাকা দিতে গিয়েই কাঁচামালের গুণমানের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। যদিও এই সমস্যার সমাধানে এ বার রাজ্যের পূর্ত দফতরকে দিয়ে রাস্তা সারাইয়ের পরিকল্পনা করেছে হাওড়া পুরসভা। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘রাজ্যের পূর্ত দফতর ও এইচআইটি-র সঙ্গে বৈঠক করে স্থির হয়েছে যে, তাদের দিয়ে পুরসভার কিছু কিছু রাস্তার সংস্কার করানো হবে। গত সপ্তাহে বৃষ্টির আগেই ৩৬টি রাস্তার নামের তালিকা তৈরি হয়েছিল। এ বার আরও ৬১টি রাস্তার তালিকা তৈরি করেছি। পুজোর আগেই মোট ওই ৯৭টি রাস্তা মেরামতির কাজ শেষ করা হবে।’’

শুক্রবারের পরে হাওড়ায় আর বৃষ্টি না হলেও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা— বেলগাছিয়া, লিলুয়া, সালকিয়া, ভট্টনগর, সীতানাথ বসু লেন, ঘোষপাড়া, বালির সাঁপুইপাড়া, বেলুড় আন্ডারপাস এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে সোমবারেও হাঁটুজল দাঁড়িয়ে। ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে জমা জল সরে যাওয়ার পরে রাস্তায় ধস নেমেছে। দীর্ঘদিন সাফাই না-হওয়া নর্দমা থেকে পলি ও নোংরা উঠে এসেছে রাস্তায়। পিচের আস্তরণ উঠে গিয়ে এক-দেড় ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস রোড, নটবর পাল রোড, জিটি রোড, লিলুয়ার অলিগলি, মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোড, পঞ্চাননতলা, রামরাজাতলা-সহ বহু এলাকায়।

Advertisement

কেন এই শোচনীয় হাল? হাওড়া পুরসভায় গত তিন বছর ধরে নির্বাচন হয়নি। তার আগে তৃণমূল বোর্ডের সময়ে শেষ দু’বছরে অধিকাংশ রাস্তাই মেরামত করা হয়নি। ফলে সংস্কারের অভাবে গত পাঁচ বছরে শহরের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ এর জন্য দায়ী করছেন ঠিকাদারদেরও। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা সারাইয়ের কারণেই কয়েক বছরে রাস্তার এই হাল বলে মনে করছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক পুরনো ঠিকাদার বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে বা অর্থবলে যাঁরা রাস্তা মেরামতের কাজ পেয়েছিলেন, তাঁদের প্রথমে স্থানীয় নেতা-কাউন্সিলরকে টাকা দিতে হয়েছে, তার পরে রাস্তা সারাই করতে হয়েছে। তাই মেরামতির সামগ্রীর গুণমানের সঙ্গে আপস করেছেন। ফলে এক-দেড় বছরের মধ্যে রাস্তা ভাঙবেই।’’

তা হলে ওইসব ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না কেন? এক পুর কর্তা বলেন, ‘‘এখন থেকে রাস্তা মেরামতকারী ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হবে যে, পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে সেই রাস্তার অবস্থা খারাপ হলে তাঁকেই মেরামত করে দিতে হবে। কোনও ঠিকাদার এই চুক্তি না মানলে এমনিতেই কালো তালিকাভুক্ত হবেন।’’

তবে হাওড়া পুরসভার কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাশীনাথ আদক অবশ্য বলছেন, ‘‘নিয়ম হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ ভাবে শহরে জল জমলে কোনও রাস্তা কী ভাবে ঠিক থাকবে? পিচের প্রধান শত্রুই তো জল। তাই আগে শহরের নিকাশি সংস্কারের কাজ করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement