সাপের ছোবল থেকে কৃষকদের বাঁচাতে দেওয়া হচ্ছে গামবুট ও গ্লাভস। নিজস্ব চিত্র।
ফি বর্ষাতেই রাজ্যে সাপের ছোবলে মৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। আবার মানুষের হাতে মারা পড়ে বহু সাপ। অথচ ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রায় প্রজাতির সাপই ‘সংরক্ষিত’। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাংলায় সাপ-মানুষ সঙ্ঘাত কমাতে সক্রিয় হল বন্যপ্রাণপ্রেমী সংস্থা ‘শের’। গত ১৬ জুলাই ‘বিশ্ব সাপ দিবস’ থেকে হুগলি হরিপাল ব্লকে শুরু হয়েছে সাপ সংরক্ষণ সংক্রান্ত কর্মসূচি।
শের-এর কর্ণধার জয়দীপ কুণ্ডু জানান, ভারতবর্ষে প্রতি বছর বন্যপ্রাণ ও মানুষের সঙ্ঘাতে মৃত্যুর যে সংখ্যা উঠে আসে তার অন্যতম কারণ হল সর্পদংশন। আমাদের রাজ্যে গ্রামবাংলাতেও একই ছবি। বর্ষার সময় সর্পদংশন গ্রামবাংলায় বড় সমস্যা। চাষের কাজে গিয়ে কৃষকেরা প্রায়শই সাপের ছোবলের শিকার হন। ফলে সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের সাপের ছোবল থেকে বাঁচাতে গামবুট এবং গ্লাভস বিতরণের কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম দিন নালিকুলে ১০০ জন কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই সব সামগ্রী। সেই সঙ্গে হয় সাপ রক্ষায় প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত একটি কর্মশালাও।
জয়দীপ বলেন, ‘‘নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে এবং তার বড় অংশই কৃষিকাজ করার সময়। সাপ-মানুষ সঙ্ঘাতের ৯৫শতাংশ ঘটে গ্রামীণ এলাকায়। যেখানে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা বেশি। এ ক্ষেত্রে সাপ ও মানুষ উভয়েরই ক্ষতি হয়।’’ তিনি জানান, ধান চাষের আগে পরিত্যক্ত জমির ঘাস ও ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করার সময় সাপ-মানুষ সঙ্ঘাতের সূচনা হয়। এরপর বৃষ্টির জল যখন পুকুর-নদী-নালা উপচে ধানজমির উপর দিয়ে বইতে থাকে তখন জমিতে বা আলের গর্তে জল ঢুকে যায়। ফলে সেখানে আশ্রয় নেওয়া সাপকে বেরিয়ে পড়তে হয়। ফের সঙ্ঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। সাপে মৃত্যুর ‘অন্যতম কারণ’ হিসেবে সময়মতো হাসপাতালে না গিয়ে ওঝা বা গুনিনের দ্বারস্থ হওয়াকেও দায়ী করেন জয়দীপ।
সাপ বাঁচানোর এই কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক তথা নালিকুলের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আন্দোলনের কর্মী কল্যাণময় দাস বলেন, ‘‘গ্রামবাংলার কৃষিজমিতে বিভিন্ন নির্বিষ ও বিষধর সাপের দেখা মেলে। চন্দ্রবোড়া,কেউটে,গোখরো, শাঁখামুটির পাশাপাশি দাঁড়াশ এবং জলঢোঁড়াও রয়েছে সেই তালিকায়। তারা আসলে কৃষকদের বন্ধু। আমাদের দেশে ফসল নষ্টের মূল কারণ ইঁদুরের উপদ্রব। সেখানে সাপই অন্যতম প্রাণী যে ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে চলেছে।’’ গ্রামবাংলার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সাপ ও মানুষের সহাবস্থান অত্যন্ত জরুরি বলে জানান তিনি।