আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ইনসেটে ভাঙা জানলার কাচ। ছবি: তাপস ঘোষ
ফের চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠল হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায়।
দিন কয়েক আগে দাবিমতো চাঁদা না-মেলায় সাহাগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে দোকান থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ ওঠে একটি কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। একই কারণে মঙ্গলবার গভীর রাতে ইট মেরে সিংহীবাগানের একটি বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আর এক কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে ওই পরিবারই শুধু নয়, গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর তরফে বুধবার চুঁচুড়া থানায় লিখিত ভাবে গণ-অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে সিংহীবাগান নতুনপাড়া (দক্ষিণ) পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা পলাতক। খোঁজ চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
এ দিন এলাকায় গিয়ে ওই পুজো কমিটির কারও দেখা মেলেনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর ওই পুজোর উদ্যোক্তারা মোটা টাকা চাঁদা দাবি করে। এ বারেও অন্যথা হয়নি। দিন কয়েক আগে তারা নতুনপাড়ায় জীবন রায় নামে এক মার্বেল মিস্ত্রির বাড়িতে গিয়ে ৪০১ টাকা দাবি করেন। জীবনবাবু তাদের জানান, করোনা পরিস্থিতিতে উপার্জন কম হচ্ছে। আর্থিক সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে ৫১ টাকা দেবেন। কিন্তু ওই যুবকেরা জানিয়ে দেয়, কম চাঁদা নেবে না। দাবিমতো চাঁদা না দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফিরে যায় বলে অভিযোগ।
বুধবার রাত ৩টে নাগাদ বাড়িতে জানলার কাচে বিকট শব্দে রায় পরিবারের লোকেদের ঘুম ভেঙে যায়। তাঁরা দেখেন, ইট ছুড়ে জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঘরে কাচ ভর্তি। জীবনবাবুর মেয়ে জানলার পাশেই বিছানায় ঘুমোচ্ছিলেন। তিনি কোনও রকমে রক্ষা পান। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, গাছপালা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ছড়িয়ে রয়েছে ইট। রাতেই ঘটনার কথা পুলিশে জানানো হয়।
জীবনবাবু বলেন, ‘‘করোনা আবহে আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ওদের বলেছিলাম, বেশি টাকা চাঁদা দিতে পারব না। তাতেই এ ভাবে হামলা চালাল। এফআইআর করলে হয়তো ফের হামলা হতে পারে! এমনিতেই ওরা বলে গিয়েছিল, ওদের কথামতো চাঁদা না দিলে এ পাড়ায় থাকতে দেবে না।’’ জীবনবাবুর প্রতিবেশী ছবি হালদার বলেন, ‘‘এই ঘটনার পরে ভয় করছে। কী দুঃসাহস! পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’
সাহাগঞ্জের ঘটনায় পাঁচ জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই সময় এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছিলেন, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ অবশ্য সব অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি। দু’জন গ্রেফতার হয়। তার পরে এ দিনের ঘটনার পরে অনেকেই বলছেন, পুলিশের উপরে ভরসা কমছে।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’