বিসর্জনের পালা চন্দননগরে। —নিজস্ব চিত্র।
নবমী নিশি পেরিয়ে দশমী। বিষাদের সুর বাজছে চন্দননগরে। অতিমারির কথা মাথায় রেখেই রবিবার জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত সাবেক ফরাসডাঙা। বিসর্জনের সময় গঙ্গার পাড়ে জন সমাগমেও জারি হয়েছে বিধিনিষেধ। হবে না ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রাও। প্রতিমা বিসর্জন পর্ব চলবে দু’দিন ধরে।
শারদোৎসব শেষ হতেই জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য দিন গোনা শুরু করেন চন্দননগরের বাসিন্দারা। রবিবার সেই পুজোর দশমী রবিবার। বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপগুলি। কোনও কোনও বাড়ির প্রতিমা ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছে গঙ্গার পাড়ে। আবার কোথাও চলছে সিঁদুর খেলা। মন খারাপের মাঝে রয়েছে ভাল লাগাও। এ বার অন্তত গত বছরের মতো কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে পুজো হয়নি। মণ্ডপসজ্জা এবং আলোকসজ্জাই হয়েছে। শেষ বেলায় নৈশ কার্ফু উঠে যাওয়ায় দর্শকও সমাগমও হয়েছে। চন্দননগরের ফটকগোড়ার বাসিন্দা সুমি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সিঁদুর খেলা হল। এ বার মাকে বিদায় দেওয়ার পালা তাই মন খারাপ। তবে এটা ভেবে ভাল লাগছে এ বার ঠাকুর দেখা হল। খাওয়াদাওয়া সবই হল। করোনার মধ্যে সাবধানতা যতটা নেওয়া যায় তা নিয়েই এ সব হয়েছে। দেবীর কাছে প্রার্থনা করলাম, আর যেন অতিমারির কাঁটা না থাকে। সকলের যেন ভাল হয়।’’
কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বরে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৭১টি পুজোর মধ্যে আজ ৮০ টি প্রতিমা বিসর্জন হবে। ফুল, মালা এবং বেলপাতা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে বলা হয়েছে।’’ চন্দননগর পুরনিগমের প্রশাসক রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চন্দননগরের রানিঘাটে ৩৪টি প্রতিমা বিসর্জন হবে। গঙ্গা দূষণ যাতে না হয় সে জন্য প্রতিমা বিসর্জনের পরেই কাঠামো তুলে নেওয়া হবে। মজুত রাখা হয়েছে ক্রেন। পর্যান্ত কর্মী মোতায়েন ঘাটগুলিতে।’’
ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় দশমীতে শাড়ি পরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করেন ১১ জন পুরুষ। বহু দিন ধরেই চলে আসছে এই প্রথা। রবিবারও দেখা যায় সেই ছবি। নারী বেশে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করেন পুরুষরা। তা দেখতে করোনা বিধি উপেক্ষা করেই ভিড় জমান অনেকে। হাওড়া থেকে ওই প্রথা দেখতে এসেছিলেন রেখা বণিক। তিনি বলেন, ‘‘তেঁতুলতলায় বরণের এই প্রথার কথা শুনেছি আগে। এ বার তা দেখলাম। কত লোক। এমনটা আগে কোথাও দেখিনি।’’ তেঁতুলতলা পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শ্রীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে পুরোহিতরা বরণ করতেন। এখন পুজো কমিটির ১১ জন পুরুষ সদস্য কাপড় পরে বরণ করেন। যা যেখতে বহু মানুষ সকাল থেকে ভিড় জমান। তবে আজকে বরণ হলেও প্রতিমা বিসর্জন হবে সোমবার।’’
বিসর্জনকে কেন্দ্র করে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চন্দননগরের ডেপুটি কমিশনার পুলিশ ভিদিত রাজ বুন্দেশ জানিয়েছেন, করোনাবিধি মেনে বিসর্জন করার কথা। তাঁর কথায় ‘‘যে ঘাটগুলিতে বিসর্জন হবে সেখানে বারোয়ারি কমিটিগুলিকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। ঘাটে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চলবে। মোতায়েন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ।’’