প্রতীকী ছবি। ফাইল চিত্র
এই মুহূর্তে আরামবাগ শহরে করোনা সংক্রমিত কত জন? তথ্য নেই পুরসভার কাছে।
সংক্রমিতের বাড়ির বর্জ্য পৃথক ভাবে সংগ্রহ করা হবে? তাঁর বাড়ির লোকজনকে কি নিভৃতবাসে থাকতে হবে? শ্রীরামপুরে পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও উত্তর মিলছে না, এ অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।
উলুবেড়িয়ার পুরপ্রশাসক অভয় দাস সংক্রমণ রোধে এখনও কোনও বৈঠকই ডাকতে পারেননি। তাঁর দাবি, ‘‘কী করব? নির্বাচনী বিধি-নিষেধে হাত-পা বাঁধা।’’
ফারাকটা স্পষ্ট। গত বছর প্রথম পর্বে করোনা সংক্রমণ রোধে হুগলির সব পুরসভা এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়া পুরসভাকে যতটা সক্রিয় দেখা গিয়েছিল, এ বার তার সিকিভাগও দেখা যাচ্ছে না। পুরসভার অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, এক দিকে নির্বাচিত পুরবোর্ড না-থাকা এবং অন্য দিকে নির্বাচনী বিধিনিষেধ কার্যকর থাকাতেই এই পরিস্থিতি। রাজনৈতিক দলগুলি এ জন্য নির্বাচন কমিশনকেই বিঁধছে।
গত বছর উলুবেড়িয়া পুর-এলাকায় করোনার সংক্রমণ ভালই ছড়িয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল দ্রুত। পুরসভার কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এ বার শহরে ইতিমধ্যেই শতাধিক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। সেই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। অথচ, এ বার মাস্ক পরার ক্ষেত্রে মাইকে প্রচার, বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করা— সব ক্ষেত্রেই পুরসভার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে নাগরিকদের একাংশের দাবি।
সংক্রমণ রোধে যা কিছু করছে, সবই মহকুমা প্রশাসন। ফলে, নীতিগত কোনও সিদ্ধান্ত পুরসভার তরফ থেকে নেওয়া যাচ্ছে না বলে মানছেন পুরপ্রশাসক অভয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘বলেন, ‘‘মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশি। তাই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা প্রশাসনের পরামর্শ মেনে যা কিছু করণীয়, করছি।’’ মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) অরিন্দম বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে।’’
অথচ, বৃহস্পতিবারই উলুবেড়িয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘ছেলের করোনা পজ়িটিভ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি। পুরসভার পক্ষ থেকে আমার বাড়ি স্যানিটাইজ় করা হয়নি। পরিবারের কারও করোনা পরীক্ষাও করেনি।’’
সংক্রমিতদের বাড়ি স্যানিটাইজ় করার ছবিটা উধাও হুগলির প্রায় প্রতিটি শহর থেকেও। সংক্রমিতের বাড়ি থেকে কোভিড বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও ছিল পুরসভার। নানা অভিযোগ থাকলেও সেই কাজ কম-বেশি হচ্ছিল। সংক্রমিতের বাড়ির লোকজনকে বাইরে না-বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। এ বার সংক্রমণ রোধে পুরসভার সেই সক্রিয়তা কোথায়?
এই পরিস্থিতি করোনাকে আরও ফুলেফেঁপে ওঠার অনুকুল পরিবেশ করে দিচ্ছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও। সংক্রমণ অনেকটা ছড়িয়ে যাওয়ার পরে টনক নড়েছে চুঁচুড়া পুরসভার। এখানে বুধবার থেকে সংক্রমিতের বাড়ির বর্জ্য আলাদা ভাবে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। একই পথে হাঁটতে চলেছে উত্তরপাড়া পুরসভাও। তবে, সংক্রমিতের বাড়ির লোকেদের বাইরে না বেরনোর ব্যাপারে কোনও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ। রিষড়া শহরে সংক্রমিতের বাড়িতে নোটিস দেওয়া হচ্ছে।
আরামবাগের পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী বলেন, ‘‘ঠিক কতজন সংক্রমিত, সেই তথ্য আমার কাছে নেই। পুরসভার তরফে পরীক্ষায় যাঁদের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে, শুধুমাত্র তাঁদের বাড়ি স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। সঙ্গে একটি হলুদ পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে আসা হচ্ছে বর্জ্য জমিয়ে রাখার জন্য। তবে, আমরা সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ১৯টির মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু করেছি। দফায় দফায় সব ওয়ার্ডেই তা হবে।’’
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরসভার উৎসাহে গত বছরের তুলনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন ডানকুনির বাসিন্দাদের একাট বড় অংশও। বিদায়ী পুরপ্রধান হাসিনা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সংক্রমিতের বাড়িতে পুরসভার ফোন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। সমস্যায় পড়লে ফোন করলেই সহযোগিতা করা হবে।’’