হুগলির নানা প্রান্তে দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি
Cracker

Sound crackers: ২৫০ টাকা ফেললেই ১০০ চকোলেট বোমা

কোনও বাড়িতে রংমশাল তৈরিতে হাত লাগাচ্ছে নাবালক, কোথাও কালীপটকা বা তুবড়িতে মশলা ভরছেন ছাপোষা বধূ।

Advertisement

প্রকাশ পাল

বেগমপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১২
Share:

বেগমপুরে তৈরি বোমা । নিজস্ব চিত্র।

আয়োজন সারা। ফের বারুদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে দুই পাড়ায়।

Advertisement

পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের বেগমপুর স্টেশন থেকে খানিক দূর গেলে খরসরাই। সেখানে ২০ নম্বর রেলগেটের পশ্চিম দিকে মালপাড়া। পূর্ব দিকে মনসাতলা। দুই পাড়াতেই বাজি তৈরি কুটিরশিল্প।

আতশবাজি হোক অথবা বিকট শব্দের চকোলেট বোমা— সব কিছুই এখানে খুল্লমখুল্লা। কোনও বাড়িতে রংমশাল তৈরিতে হাত লাগাচ্ছে নাবালক, কোথাও কালীপটকা বা তুবড়িতে মশলা ভরছেন ছাপোষা বধূ। দিন কয়েক পরেই কালীপুজো এবং ছটপুজো। তার আগে জমে উঠেছে বাজি বাজার। আদালতের নির্দেশ উড়িয়েই চলছে ‘দূষণের বিকিকিনি’। পুলিশ-প্রশাসনের হোলদোল নেই।

Advertisement

রবিবার এখানে দেখা গেল, ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সাইকেল-মোটরবাইকে কমবয়সি ছেলেরা আসছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার সন্তানের হাত ধরে দম্পতি। মনসাতলায় একটি বাজির দোকান সামলাচ্ছিলেন এক তরুণী। দোকানে ঠাসা বাজি। জানালেন, ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, কালীপটকা, শেল, চকোলেট বোমা সবই রয়েছে। শব্দের বহর অনুযায়ী চকোলেট বোমার দাম। কোনও প্যাকেটের (১০০টি) দাম ৭০ টাকা, কোনওটির ১৩০। কোনওটি আরও বেশি।

মালপাড়াতেও বাড়িতেই চকোলেট বোমা তৈরি হচ্ছে। রাখঢাকের বালাই ‌নেই। শরীরে বারুদ মেখে জোয়ান থেকে কিশোর ছেলে শব্দবাজি তৈরিতে ব্যস্ত। ক্রেতা সেজে এক জায়গায় দরদাম করে জানা গেল, আকার অনুযায়ী আওয়াজ। সেই মতোই দাম। আকার অনুযায়ী স্থানীয় ভাবে বলা হয়— ২, ৩, ৪…। ১০-ও আছে। সেটি বড় আকারের। ১০-এর আওয়াজ কেমন, জানতে চাইলে প্রত্যয়ী কারবারির জবাব, ‘‘আগে ৪ ফাটিয়ে দেখুন। তাতেই বুঝবেন, ১০ কেমন!’’ কোনও প্যাকেটের (১০০টি) দাম আড়াইশো টাকা। কোনওটি সাড়ে তিনশো। পরে বেশি করে কেনার আশ্বাস পেয়ে আওয়াজ পরখ করতে গোটা তিনেক দিয়েও দিলেন।

ফি বছর কালীপুজোর দিন কয়েক আগে খরসরাইতে রাস্তার ধারে বাজির অস্থায়ী দোকান বসে। ক্রেতার ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। হুগলি বাদেও হাওড়া, কলকাতা, বর্ধ‌মান— চতুর্দিক থেকে ক্রেতা আসেন।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, এই জেলার হরিপাল, ডানকুনি, ধনেখালি প্রভৃতি জায়গাতেও আতশবাজির আড়ালে শব্দবাজির কারবার চলে। অধিকাংশ কারখানার লাইসেন্স নেই। বহু ক্ষেত্রেই বাড়িতেই বাজি তৈরি করা হয়। কারবারিরা জানেন, এ ভাবে বাজি তৈরি ঝুঁকির। আগুন লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে, সংসারের অনটনের জন্যই ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেন বলে তাঁদের দাবি। বাড়ির মহিলা, ছোটদেরও হাত লাগাতে হয়।

হরিপালের মালপাড়াতেও কিছু বাড়িতে বাজি তৈরি হয়। এখানে দেখা গেল, এক তরুণের সারা গায়ে বারুদ লেগে। দেখেই বোঝা গেল, সে বাজি তৈরি করছিল। কয়েকটি বাড়ির সামনে বাজির পসরা। হাতে মোবাইল দেখে এক বিক্রেতা নির্দেশ দিলেন, সেটি পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে। পাশ থেকে এক মহিলা রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘কী করতে এসেছেন, ছবি তুলতে? খবরের কাগজের লোক হলে চলে যান। আমাদের হ্যাপা বাড়বে।’’

মঙ্গলবার রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ২০১৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করে কালীপুজো, ছটপুজো, বড়দিন এবং নববর্ষে শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কালীপুজোর দিন রাত ৮টা থেকে ১০টা এবং ছটপুজোয় সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত, অর্থাৎ দু’ঘণ্টা আতশবাজি পোড়ানো যাবে।

তবে, বাজির আঁতুড়ঘর ঘুরে মালুম হয়েছে, কোন ধরনের বাজি বিক্রি হবে আর কোনটা হবে না, তার কোনও নজরদারিই নেই প্রশাসনের। দেদার বিকোচ্ছে সব ধরনের বাজি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement