নিহত রিয়া কুমারী। নিজস্ব চিত্র।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়েছিল গাড়ি। তখনই হামলা চালিয়েছিলেন ছিনতাইকারীরা। এর পর তারা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করেন মহিলাকে। হাওড়ার রাজাপুরে ঝাড়খণ্ডের ইউটিউব ‘তারকা’ খুনে পুলিশের প্রশ্ন এই দু’টি ঘটনার এই সমাপতন নিয়েই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে নিহত রিয়া কুমারের স্বামী প্রকাশ কুমারের বক্তব্যও।
বুধবার সকাল ৬টা নাগাদ হাওড়ার বাগনানের রাজাপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর মহিষরেখা সেতুর কাছে গুলি করে খুন করা হয় রিয়াকে। রিয়ার স্বামী প্রকাশের দাবি, তাঁরা রাঁচী থেকে গাড়ি চড়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁদের আড়াই বছরের শিশুকন্যা। কোনও চালক ছিলেন না, গাড়ি চালাচ্ছিলেন প্রকাশই। তাঁর বক্তব্য, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তিনি গাড়ি থামিয়েছিলেন মহিষরেখা সেতুর কাছে। প্রকাশের বক্তব্য, তিনি গাড়ি থেকে নেমে প্রস্রাব করার সময় তাঁকে ঘিরে ধরে তিন জন দুষ্কৃতী। তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল বলে জানিয়েছেন প্রকাশ। তাঁর অভিযোগ, তাঁদের থেকে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। প্রকাশের দাবি, সেই সময় গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাইয়ে বাধা দিয়েছিলেন রিয়া। বাধা পেয়ে দুষ্কৃতীরা রিয়াকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়। কানের তলায় গুলি লাগে রিয়ার। এর পর দুষ্কৃতীরা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় বলে দাবি প্রকাশের। প্রকাশ আহত স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছন রাজাপুর থানার পীরতলা এলাকায়। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিষয়টি জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়াকে। কিন্তু চিকিৎসকরা রিয়াকে মৃত বলে জানান।
প্রকাশ কুমারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
প্রকাশের এই বয়ান খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশেষত তাঁদের ভাবাচ্ছে, সেতুর কাছে গাড়ি দাঁড় করানো এবং ঠিক সেই সময়েই দুষ্কৃতীদের প্রকাশকে ঘিরে ফেলা— এই দুই ঘটনার সমাপতন। এই দুই ঘটনা কাকতালীয়, না কি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এটা ছিনতাই বলে মনে হচ্ছে না। দুষ্কৃতীরা কী করে জানল যে, ওই দম্পতি মহিষরেখা সেতুর কাছে দাঁড়াবেন? তারা কি আগে থেকেই ওখানে দাঁড়িয়েছিল? না কি প্রকাশ এবং রিয়ার গাড়িটিকে অনুসরণ করছিল? তা ছাড়া সচরাচর ওই ফাঁকা জায়গায় কোনও গাড়ি দাঁড়ায় না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ বুধবারই প্রকাশকে নিয়ে যায় ঘটনাস্থলে। সেখানে গোটা বিষয়টির পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। আশপাশে কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে গুলিটি রিয়াকে করা হয়েছে সেটার খোলের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। প্রকাশের গাড়িটি পরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। তা খতিয়ে দেখবে ফরেন্সিক দলও।
বিষয়টি নিয়ে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙালিয়া বলেন, ‘‘নিহতের নাম রিয়া কুমারী। ওঁর আর একটি নাম ঈশা আলিয়া। তবে তিনি ইউটিউব করতেন কি না এ নিয়ে পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তথ্য নেই। ওঁর বাড়ির লোকজন আসছেন। ওঁরা এলে অভিযোগ দায়ের হবে। গোটা বিষয়টাই তদন্তসাপেক্ষ।’’