শহরের মধ্যে ‘অবৈধ’ ভাবে তৈরি হওয়া আবাসনের প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ দেখা যায় সম্প্রতি। নিজস্ব চিত্র
পুরসভা অনুমোদিত আবাসনের নকশা বদলে যাচ্ছে বেমালুম। সেই আবাসন কিনে যেমন বিপাকে পড়ছেন আবাসিকরা। পুর-কর্তৃপক্ষেরও সঙ্কট কম নয়। এমনই অভিযোগ হুগলির বৈদ্যবাটীতে।
এই শহরে প্রায় ২০০ আবাসন রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই আবাসনগুলির অধিকাংশ বাসিন্দা শুধু রেজিস্ট্রি করেই দায় সারছেন। কিন্তু তাঁরা মিউটেশনে আগ্রহী নন। সে কারণে পুর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা পুর-কর হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ। পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন,‘‘শহরের আবাসনগুলিতে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তবে, সেভাবে সাড়া মেলেনি।’’
কিন্তু আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ অন্য। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার কাছে মিউটেশনের জন্য গেলে আবাসনের ত্রুটি দেখিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। তার জেরে মিউটেশনে খরচ পড়ছে সাধারণের থেকে প্রায় ১০ গুণ। সে কারণেই মিউটেশন করাতে গিয়েও পিছিয়ে আসছেন অনেকে।
‘আবাসনের ত্রুটি’ টা কেমন?
জানা গিয়েছে, পুরসভার তরফে কোনও আবাসন চার তলা করার অনুমতি মিললেও সেখানে হয়েছে পাঁচ তলা। পুরসভার অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী একটা আবাসনের পাশে যতটা ছাড়ের উল্লেখ থাকে, মানা হচ্ছে না তাও। সরু গলির মধ্যে মাথা তুলছে বড় বড় আবাসন। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেই পথে না ঢুকতে পারবে অ্যাম্বুল্যান্স, না দমকলের গাড়ি।
আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা এই ত্রুটির বিষয়গুলি জানতেন না। প্রোমোটারদের থেকে ন্যায্য দামে ফ্ল্যাট কিনে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন তাঁরা। এক আবাসিকের ক্ষোভ, ‘‘আমার অংশে মিউটেশনে যা খরচ হওয়ার কথা, জরিমানা দিলে তার প্রায় দশ গুণ বেশি খরচ হবে। অত সাধ্য নেই আমার।’’ অন্য এক আবাসিকের ক্ষোভ, ‘‘এখন পুরসভা ওই ত্রুটিগুলো বললে তো হবে না! কাজ হল যখন, তখন কেন পুরসভা বন্ধ করেনি? এখন এত টাকা খেসারত দেওয়া সম্ভব নয়।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রোমোটারের কথায়, ‘‘বর্ধিত অংশের ক্ষেত্রে নতুন করে আবাসনের সংশোধন নকশা জমা দেওয়া হয়। পুরসভা মোটা টাকা জরিমানা করে তবে ওই নকশার অনুমোদন দেয়। এখন আবার নতুন করে জরিমানা নেওয়ার কোনও মানে হয় না।’’
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁরা জানান, পুরসভা আইন মেনে আবাসনের ভিতরের অংশের পরিবর্তনের জন্য সংশোধিত নকশার অনুমোদন দেয়। তার জন্য অতিরিক্ত টাকা পুরসভাকে জমা দিতে হয়। কিন্তু আবাসনের বাহ্যিক কোনও বদলের অনুমোদন দেয় না পুরসভা।
নিয়ম ভেঙে বৈদ্যবাটী শহর জুড়ে একের পর এক আবাসন তৈরির অভিযোগ নতুন নয়। তা নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন এলাকার বহু বাসিন্দা। এমন ঘটনার পর তাঁদের দাবি, এ বার বেআইনি নির্মাণের অভিযোগকে এক প্রকার মান্যতাই দিলেন পুর কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মূল দোষী তো পুরসভা। একবার প্রোমোটারদের থেকে টাকা নিয়ে বহুতল তোলার অনুমতি দিয়ে দিল। কাজে ভুল হলে তো মাঝেই তা বন্ধ করা যেত। তা না করে এ বার আবাসিকদের থেকেও জরিমানা নেওয়া হচ্ছে।’’ অন্য এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা বহুবার আবাসনগুলির ত্রুটি নিয়ে পুরসভার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু পুরসভা গুরুত্ব দেয়নি। এ বার পুরসভাই নিজের জালে ফেঁসেছে।’’
অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো। তাঁর দাবি, ‘‘এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’